শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫

দক্ষ কর্মী ভিসার ফি ৬৭ শতাংশ বাড়ালো যুক্তরাষ্ট্র

দক্ষ কর্মী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চাইলে এখন গুণতে হবে এক লাখ ডলার। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এমন একটি একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতোদিন এই প্রোগ্রামে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোকে ভিসা বাবদ প্রতি বছর দেড় হাজার ডলার ফি দিতে হতো। সেটি এখন বাড়িয়ে এক লাখ ডলার করা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, এই পদক্ষেপ প্রযুক্তি খাতের জন্য বড় ধরনের আঘাত হতে পারে, যেখানে ভারত ও চীনের দক্ষ কর্মীদের ওপর ব্যাপক নির্ভরতা রয়েছে।

জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ট্রাম্প অভিবাসন নীতিতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। এই এইচ-১বি ভিসা সংস্কার তার প্রশাসনের অস্থায়ী কর্মসংস্থান ভিসা পুনর্গঠনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা বলেও জানিয়েছে রয়টার্স।

এইচ-১বি ভিসা কী?

১৯৯০ সালে আমেরিকায় এই ধরনের ভিসা চালু হয়েছিলো। যে কোনো বিষয়ে ন্যূনতম স্নাতক স্তরের ডিগ্রি থাকলে এই ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। বিশেষত আমেরিকার বিজ্ঞান, গণিত, তথ্যপ্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রে এই ভিসার চাহিদা রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে এইচ-১বি ভিসার মেয়াদ থাকে তিন বছর।

এইচ-১বি ভিসার প্রয়োজনীয়তা কী?

এইচ-১বি ভিসা হল একটি অ-অভিবাসী ভিসা যা মার্কিন কোম্পানিগুলো বিশেষ পেশায় স্নাতক-স্তরের কর্মীদের নিয়োগ করতে দেয় যার জন্য আইটি, ফিনান্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত, বিজ্ঞান, চিকিৎসা ইত্যাদির মতো বিশেষ ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক বা প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রয়োজন।

আমেরিকানদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর

মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছেন, আপনি যদি কাউকে প্রশিক্ষণ দিতে চান, তবে আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাম্প্রতিক স্নাতকদের প্রশিক্ষণ দিন। আমেরিকানদের প্রশিক্ষণ দিন, আমাদের চাকরি নিতে বিদেশি কর্মী আনা বন্ধ করুন।

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ প্রযুক্তি শিল্পের সঙ্গে বড় দ্বন্দ্বের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যারা তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে লাখ লাখ ডলার অবদান রেখেছিল।

বড় কোম্পানির প্রতিক্রিয়া

ঘোষণার পর, মাইক্রোসফট এবং জেপি মর্গান তাদের এইচ-১বি ভিসাধারী কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। রয়টার্স বলছে, নতুন ফি কাঠামো কার্যকর হওয়ার আগে এই কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদের শনিবার মধ্যরাতের আগে দেশে ফিরে আসতে বলেছে।

জেপি মর্গানের ভিসা আবেদন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ওগলেট্রি ডিকিন্স এক ইমেইলে বলেছে, যারা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এড়িয়ে দেশে থাকা উচিত, যতক্ষণ না সরকার স্পষ্ট ভ্রমণ নির্দেশনা দেয়।

এইচ-১বি প্রোগ্রামের সমালোচকরা, বিশেষ করে মার্কিন প্রযুক্তি কর্মীরা বলছেন এটি মজুরি কমিয়ে রাখে এবং আমেরিকানদের চাকরি থেকে বঞ্চিত করে। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, কিছু নিয়োগকর্তা এই প্রোগ্রামের অপব্যবহার করে মজুরি কমিয়ে আমেরিকান কর্মীদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বিদেশি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত কর্মীর সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে ২৫ লাখে পৌঁছেছে, যেখানে সামগ্রিক STEM কর্মসংস্থান মাত্র ৪৪.৫% বেড়েছে।

অন্যদিকে, প্রোগ্রামের সমর্থকরা, যেমন টেসলার প্রধান নির্বাহী এলন মাস্ক (যিনি নিজেও একজন প্রাক্তন এইচ-১বি ভিসাধারী) বলছেন, এটি প্রতিভার ঘাটতি পূরণে অপরিহার্য। মেনলো ভেঞ্চার্সের অংশীদার দীদি দাস এক্স-এ লিখেছেন, নতুন ফি বিশ্বের সেরা প্রতিভাকে যুক্তরাষ্ট্রে আকৃষ্ট করার প্রণোদনা কমিয়ে দেবে। যুক্তরাষ্ট্র যদি সেরা প্রতিভা আকর্ষণ বন্ধ করে, তবে এটি উদ্ভাবন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস করবে।

নতুন ফি কাঠামো বড় কোম্পানির জন্য লাখ লাখ ডলারের অতিরিক্ত খরচ যোগ করতে পারে, যা ছোট প্রযুক্তি ফার্ম ও স্টার্টআপগুলোর জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর হতে পারে। বর্তমানে ভিসার লটারিতে প্রবেশের জন্য সামান্য ফি এবং অনুমোদনের পর কয়েক হাজার ডলার ফি দিতে হয়। এই নতুন ফি কোম্পানিগুলোকে উচ্চ-মূল্যের কাজ বিদেশে স্থানান্তর করতে বাধ্য করতে পারে, যা চীনের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতিযোগিতায় আমেরিকার অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ই-মার্কেটার বিশ্লেষক জেরেমি গোল্ডম্যান বলেছেন, স্বল্প মেয়াদে ওয়াশিংটন প্রচুর রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারে; কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র তার উদ্ভাবনের ধার হারানোর ঝুঁকি নিচ্ছে।

ভারত ও চীনের উপর প্রভাব

২০২৪ সালে ভারত এইচ-১বি ভিসার সর্বাধিক সুবিধাভোগী ছিল, যা ৭১% অনুমোদিত ভিসার প্রতিনিধিত্ব করে এবং চীন ছিল ১১.৭% নিয়ে দ্বিতীয়। ২০২৫-এর প্রথমার্ধে অ্যামাজন ও এডব্লিউএস ১২ হাজারের বেশি ভিসা পেয়েছে। মাইক্রোসফট ও মেটা প্রত্যেকে পাঁচ হাজারের-এর বেশি পেয়েছে। ভারতীয় আইটি কোম্পানি যেমন ইনফোসিস ও উইপ্রোর শেয়ার ২ থেকে ৫% হ্রাস পেয়েছে এবং কগনিজেন্ট টেকনোলজি সলিউশনসের শেয়ার প্রায় ৫% পড়েছে।

লুটনিক দাবি করেছেন, সব বড় কোম্পানি এই এক লাখ ডলার ফি-এর সঙ্গে একমত। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে, বেশিরভাগ বড় প্রযুক্তি, ব্যাংকিং ও পরামর্শক কোম্পানি মন্তব্যের জন্য রয়টার্সকে তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়নি। ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাস ও নিউইয়র্কে চীনা কনস্যুলেট জেনারেলও কোনো মন্তব্য করেনি।

ভবিষ্যৎ প্রভাব

এই পদক্ষেপ আমেরিকান কর্মীদের জন্য মজুরি বাড়াতে এবং রাজস্ব সংগ্রহে সাহায্য করতে পারে। তবে এটি কানাডা, ইউরোপ বা ভারতে কাজের স্থানান্তর ত্বরান্বিত করতে পারে। প্রযুক্তি শিল্পের লবিগুলো থেকে আইনি চ্যালেঞ্জের সম্ভাবনাও রয়েছে। এই নীতি ট্রাম্পের সুরক্ষাবাদী নীতির প্রতিফলন, যা স্বল্পমেয়াদী রাজনৈতিক সুবিধার জন্য উদ্ভাবনের সম্ভাবনাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
সম্পর্কিত সংবাদ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!