কোনোভাবেই বাড়ছে না রাজস্ব। রাজস্ব আদায়ে বেড়েই চলছে ঘাটতি । আদায়ের পরিবর্তিত অবস্থায় আরও কমেছে অভ্যন্তরীণ আয়। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাবস্থার ফলে বাড়ছে এই ঘাটতি। অর্থবছরের মাঝপথে ঢালাও শুল্ককর বাড়িয়েও রাজস্ব আহরণ পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। সংস্কার পদক্ষেপেরও মিলছে না তেমন কোনো সুফল।
রাজস্ব আদায় কমে আসায় বাড়ছে সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা। অর্থের অভাবে থমকে যাচ্ছে উন্নয়ন কার্যক্রম। এ অবস্থায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের কাঁধে দেয়া হচ্ছে রাজস্ব আদায়ের বিশাল টার্গেট।
চলতি অর্থবছরের নয় মাসের রাজস্ব আদায় চিত্র হতাশাজনক। হালনাগাদ তথ্য বলছে, জুলাই থেকে মার্চ এই নয় মাসে লক্ষ্য থেকে সাড়ে ৬৫ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে আছে এনবিআর। আদায় না হওয়ায় সংশোধিত যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় তাতেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। বছর শেষে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে ঘাটতির এই হিসেব।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, আমাদের প্রত্যক্ষ করের ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত। এরমধ্যে ইনকাম ট্যাক্স, প্রোপার্টি ট্যাক্স’র মতো বিষয়গুলো একটি কর ব্যবস্থার মূল চাবিকাঠি হওয়া উচিত। আয়করের ক্ষেত্রে অনেকের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকলেও তাদের মধ্যে সবাই আয়কর পরিশোধ করছেন না।
কাস্টমস, ভ্যাট এবং আয়কর-তিন ক্ষেত্রেই আদায় কম। লক্ষ্যমাত্রা থেকে সব খাতই অনেক পিছিয়ে আছে। লক্ষ্যের তুলনায় সবচেয়ে বেশি কম আদায় করেছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট এবং কাস্টমস। এই আদায় বৃদ্ধি না পাবার নেপথ্যের কারণ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, কর ব্যবস্থার মধ্যে যে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি বা বিভিন্নভাবে কর অব্যাহতি দেয়ার প্রবণতা রয়েছে। এসব বিষয় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উভয় ক্ষেত্রেই কর আদায়ের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই শুধুমাত্র করের হার বৃদ্ধি করে রাজস্ব আদায় সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।
এমন অবস্থায়, আগামী অর্থবছরের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের কাছে দেয়া হচ্ছে উচ্চাভিলাষি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য। যার আকার হতে পারে প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ জানালেন, কর আদায় কম হওয়ার আরেকটা কারণ হলো বড় প্রতিষ্ঠান বা সম্পদশালীরা কর কম দেয়। ট্যাক্স অফিসগুলোর আধুনিকায়ন এবং স্বয়ংক্রিয় করলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সবকিছু ঠিক থাকলে খুব শিগগিরই ভেঙে যাবে এনবিআর। আগামি অর্থবছর থেকে করনীতি এবং কর প্রশাসন নামে শুরু হবে দুই বিভাগের কার্যক্রম।