সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থা জারি করলেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। তাদের দাবি, সংসদে আইন পাস করে সরকারি চাকরির কোটাব্যবস্থার ‘যৌক্তিক’ সংস্কার করতে হবে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা বলছেন, শুধু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ কোটা রেখে সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে সব ধরনের কোটা বাতিল করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থা জারির আদেশের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার দুপুরে শাহবাগ মোড়ে অবরোধ কর্সূচি থেকে এ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এ আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, আমরা কি কয়েকদিন পর রাস্তায় নামবো? আমরা ঝুলন্ত সিদ্ধান্ত মানি না। হাই কোর্টের রায়ে আমরা আশাহত। আমাদের আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়ার জন্য এই রায় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা দমে যাইনি। কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
হাসনাত বলেন, আমাদের দাবি হাই কোর্টের কাছে নয়। আমাদের এক দফা দাবি নির্বাহী বিভাগের কাছে। সংসদে আইন পাস করে কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে।
সন্ধ্যা ৭টায় আনুষ্ঠানিকভাবে রায়ের প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে আন্দোলনকারীদের এই সমন্বয়ক।
তিনি বলেন, আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। বিচার বিভাগের প্রতি আমাদের শতভাগ শ্রদ্ধা আছে। কিন্তু আমরা সাময়িক কিছুতে আর বিশ্বাস করছি না। আমাদের ঘরে ফেরাতে হলে কোটা বৈষম্য দূর করতেই হবে।
সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের বুধবার স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ। এ আদেশের ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বহাল থাকছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
ওই পরিপত্রে বলা হয়, নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো। এখন থেকে মেধারভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কোটা ব্যবস্থা আগের মতই বহাল থাকবে বলে ওই পরিপত্রে বলা হয়।
ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন।
গত ৫ জুন সেই আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাই কোর্ট বেঞ্চ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। গত ৪ জুলাই এ বিষয়ে আপিল বিভাগে শুনানির দিন ধার্য ছিলো। তবে রিটকারীর পক্ষে সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্টের রায় আপাতত বহাল রাখে আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার দুই শিক্ষার্থী হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য অনুমতি চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করেন। চেম্বার জজ বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য বুধবারের কার্যতালিকায় রাখেন।
হাই কোর্টের রায়ের পর থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে আন্দোলনে নামেন চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা। ১ জুলাই থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে তারা কোটা বাতিলসহ চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ করছিলেন।
এর অংশ হিসেবে গত রোব ও সোমবার ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে তারা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন। তাদের অবরোধের কারণে শহরজুড়ে তীব্র যানজটে নাকাল হতে হয় ঢাকাবাসীদের।
বুধবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীরা। তাদের অবরোধের কারণে পুরো ঢাকা জুড়ে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় রেল চলাচল। আগেরবারের মতো চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় নগরবাসীকে।