রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিলের পরও জামায়াতে ইসলামীর সভা-সমাবেশ করার বিরুদ্ধে এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ‘অপেক্ষা করুন, আদালতের হাত অনেক লম্বা। চিন্তা-ভাবনা করেই এ বিষয়ে আদেশ দেব।’
বৃহস্পতিবার শুনানিকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ ছাড়া জামায়াতের সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে করা আবেদনের শুনানিতে বারবার সময় নেওয়ায় উষ্মা প্রকাশও করেন প্রধান বিচারপতি।
শুনানিকালে জামায়াতের অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিনের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, কেন বারবার সময় নিচ্ছেন? সময় নিয়ে কোর্টে আসেন না কেন? এখানে সময় নেবেন আর অন্য কোর্টে মামলা করবেন তা হতে পারে না। আমরা সবই সিসি ক্যামেরায় দেখতে পাই। আমরা শেষবারের মতো সময় দিচ্ছি। এটা মনে রাখবেন, আদালতের হাত অনেক লম্বা।
এরপর আগামী ৬ নভেম্বর এই মামলা শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ।
এর আগে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আবেদন করে বলেন, আদালতের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। সেই রায় বহাল আছে। কিন্তু রায় বহাল থাকার পরও জামায়াত সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছে, যা সুপ্রিমকোর্টের রায়ের লঙ্ঘন। এ জন্য শুনানি না হওয়া পর্যন্ত সভা-সমাবেশ যাতে না করতে পারে সেজন্য নিষেধাজ্ঞা চাচ্ছি। এ সময় তিনি পত্রিকার কিছু ছবি ও প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন।
পরে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে আদেশ দেব।
শুনানিতে জামায়াতের পক্ষে জয়নুল আবেদীন তুহিন বলেন, প্রস্তুতির জন্য সময় দরকার। প্রধান বিচারপতি বলেন, কীসের প্রস্তুতি? যদি কেস না চালান তাহলে বলবেন, তাহলে আমরা সেভাবে আদেশ দেব।
শুনানিতে তানিয়া আমীর বলেন, গত জুলাই মাসে আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। এরপর চার মাস পেরিয়ে গেছে। প্রতিপক্ষ বারবার সময়ের আবেদন করেই যাচ্ছে।
পরে প্রধান বিচারপতি বলেন, অবকাশের পর এই মামলাটি শুনব।
উল্লেখ্য, এক দশক আগে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। ওই রায়ের বিরুদ্ধে তখনই আপিল করে জামায়াত। সেই আপিলটি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।
আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় গত ১০ জুন ঢাকায় সমাবেশ করে জামায়াত। এই সমাবেশে আপত্তি জানিয়ে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রিট করেন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের মামলার রিটকারী পক্ষ।
রিটে আবেদনে বলা হয়, আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতের সভা-সমাবেশ, মিছিলসহ কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মসূচি পালনে যেন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কারণ, নিবন্ধনবিহীন দলটির যে কোনো কর্মসূচি পালন উচ্চ আদালতের রায়ের বরখেলাপ। আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় জামায়াত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলে বিচারাধীন আপিলটি অকার্যকর হয়ে পড়বে।