ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে নৃশংসভাবে হত্যার অন্যতম অভিযুক্ত কসাই জিহাদ হাওলাদারকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও মরদেহ অংশ বিশেষ উদ্ধারের জন্য আদালতে তোলা হয়েছে।
আনারের দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলার কাজে জিহাদকে মুম্বাই থেকে ভাড়া করে আনা হয়। জিহাদ সেখানে কসাইয়ের কাজ করতেন।
শুক্রবার কসাই জিহাদকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসাত আদালতে নেওয়া হয়।
পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে জিহাদ স্বীকার করেছে যে, আখতারুজ্জামানের শাহিনের নির্দেশে তিনিসহ চারজন মিলে এমপি আনারকে ফ্ল্যাটে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।
এরপর তারপর ওই ফ্ল্যাটের মধ্যেই পুরো শরীর থেকে সব মাংস আলাদা করে জিহাদ মাংসের কিমা করে তারপর তা কিছু পলিথিনে রেখে দেয়। হাড়গুলোকেও ছোট ছোট টুকরো করে প্যাকেট করা হয়। পরে সেই প্যাকেটগুলো ফ্ল্যাট থেকে বের করে বিভিন্ন ধরনের পরিবহন ব্যবহার করে কলকাতা ও আশপাশের এলাকায় ফেলে দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার ভোরে সিআইডি ও পুলিশের হাতে আটক হয় জিহাদসহ ট্যাক্সি ক্যাব চালক। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার পোলেরহাট থানার কৃষ্ণমাটি এলাকার একটি খালে মরদেহের কিছু অংশ ফেলা হয়েছে।
এরপর জিহাদকে নিয়ে রাতেই ওই খালে অভিযান শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে তারা। সরিয়ে দেয়া হয় আশপাশের লোকজনকে।
যদিও শুক্রবার পর্যন্ত মরদেহের কোনো অংশ উদ্ধার করা যায়নি। তবে তা খুঁজতে এবার মাঠে নেমেছে স্থানীয় ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ।
গত ১২ মে ঝিনাইদহর কালীগঞ্জ থেকে কলকাতায় যাওয়ার পরেরদিন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান তিনবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার।
বুধবার সকালের দিকে তার খুনের খবর প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ বলছে, কলকাতার উপকণ্ঠে নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীভা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে আনারকে খুন করা হয়।
খুনের আলামত মুছে ফেলতে দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। এরপর সুটকেস ও পলিথিনে ভরে ফেলে দেওয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে দুই দেশের পুলিশ। কলকাতায় জব্দ করা হয়েছে হত্যাকাণ্ড ও মরদেহের কাজে ব্যবহার করা দুইটি গাড়ি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজনকে।
আর ঢাকা থেকে ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনজন। এরা হলেন- হত্যাকাণ্ডের মূল সংঘটক ও চরমপন্থি সংগঠন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভুঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি।
পুলিশ বলছে, পুরো হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী বা মাস্টারমাইন্ড হলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আখতারুজ্জামান শাহিন। পরিকল্পনার পর কলকাতায় বাসা ভাড়া করে লোক নিয়ে যান। এরপর ঢাকায় ফেরেন শাহিন। হত্যাকাণ্ডের পর সবাই ঢাকায় ফেরার পর দেশ থেকে পালিয়ে যান শাহিন।
কলকাতা পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, আনারকে সঞ্জীভা গার্ডেনে হত্যা করার পর মরদেহ অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে। তবে মরদেহ পাওয়া নিয়ে পরিষ্কার করে তারা বলছে না এখনও।
মূলত পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দারা বাংলাদেশের সংসদ সদস্যের মরদেহ উদ্ধারে কোমর বেধে নেমেছে। কীভাবে হত্যা করে হয়েছে, তা দুই দেশের পুলিশ হানে। এখন প্রয়োজন দেহাংশ উদ্ধার করা। তবে পুলিশের ধারণা, দেহাংশ উদ্ধার প্রায় অসম্ভব।
গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি জানিয়েছে, মরদেহের মাংস একেবারে কিমা এবং হাড়গুলোরও ছোট ছোট টুকরো করা হয়েছিল। ফলে মরদেহের সব অংশ উদ্ধার একেবারেই অসম্ভব।
দকে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ তল্লাশি চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। তবে অন্ধকার থাকায় তা বেশিক্ষণ চালানো সম্ভব হয়নি। তাই শুক্রবার তাকে এনে আবারো তল্লাশি চালাতে চায় পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বনগাঁও অঞ্চলের গোপালনগরে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জিহাদ হাওলাদার। পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত জিহাদ বাংলাদেশি নাগরিক এবং একজন দক্ষ কসাই।
অবৈধভাবে মুম্বাইয়ে বাস করছিলেন তিনি। জেরায় জানিয়েছেন, তার বাবা জয়নাল হাওলাদার খুলনার বাসিন্দা। দুই মাস আগে তাকে কলকাতায় নিয়ে আসেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহিন।
জিহাদ আরও স্বীকার করেছে, আখতারুজ্জামানের নির্দেশে তারা পাঁচজন মিলে এমপি আনারকে ফ্ল্যাটে হত্যা করেন। এরপর আলামত মুছে ফেলতে মরদেহ টুকরো করেন। মরদেহের মাংস কিমা করে পলি প্যাকে রাখা হয়। হাড় ছোট ছোট টুকরো করে রাখা হয় স্যুটকেসে। তারপর বিভিন্ন অঞ্চলে তা ফেলে দেয়া হয়।