সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে আলোচনায় এসেছে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ‘প্রলয় গ্যাং’। এই গ্যাংয়ের সদস্যরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের (দ্বিতীয় বর্ষ) ছাত্র।
এই গ্যাং বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চুরি, ছিনতাই, মাদক, অবৈধ ব্যবসার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিক্রেট গ্রুপ তৈরি করে এসব অপরাধ করেন এই গ্যাংয়ের সদস্যরা। গ্যাংয়ের একটি অংশ সংঘবদ্ধ মারামারিতে অংশ নেয়, অন্য অংশ মাদকের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির তিন মাস পর থেকে প্রলয় গ্রুপের সদস্যরা সংঘটিত হন। প্রথম পর্যায়ে তারা উদ্যানের আশপাশে মাদক সেবনে জড়ান। পরে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য তাদের অপরাধের মাত্রা বিস্তৃত করেন। তারা ক্যাম্পাসে সংঘবদ্ধভাবে চলাফেরা করেন, আড্ডা দেন।
তারা ঢামেকের ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ অনেককে মারধর করেন। গেল ২৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোবায়েরকে মারধর করলে তাদের অপকর্মের বিষয়টি সামনে আসে। জোবায়েরের মা এই চক্রের সদস্যদের নাম উল্লেখ করে মামলা করে।
এই মামলায় আসামি, শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের তবারক, আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগের ফয়সাল আহম্মেদ সাকিব ও ফারহান লাবিব, দর্শন বিভাগের অর্ণব খান, মার্কেটিং বিভাগের মো. শোভন, নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের নাঈমুর রহমান দুর্জয়, রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের সাদ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের সিফরাত সাহিল, সমাজকল্যাণ বিভাগের হেদায়েত নূর, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাহিন মনোয়ার। তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাদমান তাওহিদ বর্ষণ, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সৈয়দ নাসিফ ইমতিয়াজ সাইদ, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের আবু রায়হান, লোক প্রশাসন বিভাগের প্রত্যয় সাহা, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আব্দুল্লাহ আল আরিফ, কবি জসিম উদ্দিন হলের রহমান জিয়া, চাইনিজ ল্যাংগুয়েজ বিভাগের ফেরদৌস আলম ইমন, ফ্যাইন্যান্স বিভাগের মোশারফ হোসেন ও জগন্নাথ হলের জয় বিশ্বাস।
একটি সূত্র জানায়, এদের মধ্যে তবারক, ফয়সাল আহমেদ সাকিব, সাদ, নাসিফ মারামারিতে নেতৃত্ব দেন। বাকিরা মাদকাসক্ত। তবে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর তারা গা ঢাকা দিয়েছেন।
এই গ্যাংয়ের বাকিদের চিহ্নিত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির প্রধান সলিমু্ল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল রউফ মামুন বলেন, আমরা রোববার অফিসিয়ালি সভা করব। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেব। ক্যাম্পাসে এ ধরনের অপরাধকে প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না। অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি অব্যাহত থাকবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তারা যেন বাবা-মায়ের স্বপ্নের কথা ভুলে না যায়, অপকর্মে লিপ্ত হয়ে নিজের মেধাকে নষ্ট না করে। এ ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হলে একইভাবে শাস্তির আওতায় আনা হবে।