নতুন একটি আয়কর আইন আসছে, যার আওতায় বিদেশে সম্পদের খোঁজ পেলে জরিমানার সম্মুখীন হতে হবে। সোমবার (৫ জুন) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সূত্রটি জানিয়েছে, বিদেশে সম্পদ থাকলে আয়কর রিটার্নে তা উল্লেখ করতে হবে। যদি কেউ বিষয়টি উল্লেখ না করে এবং এনবিআর অনুসন্ধান চালিয়ে বের করে- তাহলে বড় ধরণের শাস্তির বিধান থাকছে নতুন আয়কর আইনে।
কানাডার বেগম পাড়া, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোমসহ যেসব জায়গায় বাংলাদেশিরা অবৈধভাবে ধনসম্পদ করেছেন- তাদের জন্য নতুন এ আয়কর আইন দুঃসংবাদ নিয়ে আসছে।
নতুন এ আয়কর আইনে বলা হয়েছে, কোনো করদাতা যদি তার রিটার্নে বিদেশে থাকা সম্পদ প্রদর্শন না করেন, আর সেই সম্পদের খোঁজ যদি কর কর্মকর্তারা পান এবং ওই সম্পদ অর্জনের উৎস ও অন্যান্য বিষয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারেন তবে কর কর্মকর্তারা জরিমানা করতে পারবেন। এ ছাড়া বিদেশে থাকা সম্পত্তির ন্যায্য বাজারমূল্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা ও আদায়ও করতে পারবেন তারা।
এ আইনকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা। তারা বলেন, এটি ভালো উদ্যোগ। তারপরও নির্ভর করছে এটি কতটা নিরপেক্ষ ও দক্ষতার সঙ্গে প্রয়োগ করা হবে।
এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আইন হচ্ছে ভালো কথা। তবে এর প্রয়োগে যেন সঠিক হয়। ট্যাক্স মোবিলাইজেশনের জন্য এটি ভালো উদ্যোগ হতে পারে। এটাও দেখতে হবে ট্যাক্স আদায়ে যেন খুব জবরদস্তি না হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ; তা হলো সবার ক্ষেত্রে যেন একই ট্রিটমেন্ট হয়। যদি কাউকে কাউকে খুঁজে ব্যবস্থা নিলো- তাহলে এটা ফেয়ার হবে না।
বিদেশে থাকা সম্পদ খুঁজে তো আগেও বের করা যেত। প্রচলিত আইনেই বিদেশে থাকা অপ্রদর্শিত সম্পদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব বলেও মনে করেন ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে কোনো আইনকে আমি ঢালাওভাবে সমালোচনা করতে চাই না। তবে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যাতে এটি সমানভাবে হয়। এমন যেন না হয়, কয়েকজনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হলো, অন্যকে না দেখার ভান করলাম। রাজস্ব আদায় করতে হবে। এবং এটা যেন হয় পরিমিত হয়। বিষয়টি এমন হওয়া প্রয়োজন কে দুর্নীতি করে সম্পদ তৈরি করলো সেটা ধরা। কে সামর্থবান হওয়ার পরও ট্যাক্স দিচ্ছে না তা কর আওতার মধ্যে আনা। প্রচলিত আইনে যদিও এটা সম্ভব। তারপরও আইন হচ্ছে, এর যেন অপপ্রয়োগ না হয়।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষ বিদেশে টাকা নিয়ে গেছে। এগুলো আনার জন্য চেষ্টা করা হয়েছে। এই আইনকে সেই চেষ্টারই অংশ মনে করছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ও রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জাহিদ বখত। অবশ্য নতুন আইন কতটা কার্যকরী হবে, সে বিষয়ে প্রশ্ন আছে তার।
জাহিদ বখত বলেন, যারা টাকা পাচার করেন খুবই সাবধানতা অবলম্বন করে এটা করেন। নিজেদের নামে করেন না। সন্তান, স্ত্রী বা আত্মীয় স্বজনের নামে বিদেশে সম্পদ সংরক্ষণ করেন। বিদেশে গিয়ে এটা ধরা খুবই কঠিন হয়ে যায়। বিদেশে সরকারও অনেক সময় এ ধরণের কাজে সহযোগিতা করে না। সে সব দেশে সম্পদ যাক, এটা অনুপ্রাণিত করে। এ জন্য আইনে যেটা করছে, এর উদ্দেশ্যে ঠিক আছে।
নতুন এ আইন কার্যকর করতে যেসব দেশে টাকা যায়, সেসব দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে পরামর্শ দেন তিনি। এটি সম্ভব হলে আইন কার্যকর করাও সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।