ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের তথ্য সংগ্রহ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব রাজনৈতিক দল গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) ও রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা-২০০৮ এর শর্ত মেনে চলছে কিনা-সেই তথ্য চেয়েছে কমিশন।
সম্প্রতি নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়ে এসব তথ্য জানাতে বলা হয়। তথ্য দেওয়ার জন্য দলগুলোকে ৩০ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছে। এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পেতে ২০টির বেশি দল আবেদন করেছে। ৩০ অক্টোবর আবেদন জমা দেওয়ার সময় শেষ। এরপর এসব দলের বিষয়েও তদন্ত করবে নির্বাচন কমিশন। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে। তথ্যগুলো পাওয়ার পর তা কমিশনে উপস্থাপন করা হবে। কমিশন যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের তথ্য মাঠপর্যায়ে যাচাই করা হবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত পাইনি। কমিশন যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইসিতে নিবন্ধন পেতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওইসব দলগুলোর মাঠপর্যায়ে অফিস আছে কিনা, নিবন্ধন শর্ত পূরণ করে কিনা-এসব বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে।
ইসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ৩৯টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্ত প্রতিপালন করছে কিনা-সেই তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের কর্মপরিকল্পনায় রয়েছে। ওই তথ্য পাওয়ার পর পর্যালোচনা করে দলগুলোর নিবন্ধন বহাল রাখা হবে, নাকি কোনোটির নিবন্ধন বাতিল করা হবে-সেই বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে বলেও উল্লেখ রয়েছে।
কমিশনের ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া হিসাবে রাজনৈতিক দলের তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়া মে মাসের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে। তারা আরও জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া তথ্যের সঠিকতা মাঠপর্যায়ে যাচাইয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কমিশন। তথ্য পাওয়ার পর এ বিষয়ে কমিশনের কাছে নির্দেশনা চাইবে ইসি সচিবালয়।
ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়ে নিজ নিজ দলের কয়েক ধরনের তথ্য জানতে চেয়েছে। ইসির উপ-সচিব মো. আব্দুল হালিম খান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব শর্ত প্রতিপালন করার শর্তে ইসিতে নিবন্ধন পেয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়নের বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়েছে। চিঠিতে নিবন্ধন পাওয়ার শর্ত এবং যেসব কারণে একটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়-সেইসব শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে-আরপিওর অনুচ্ছেদ ৯০(খ) এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা-২০০৮ এর বিধি ৯ শর্তাদি প্রতিপালন সম্পর্কে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ইসিকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। আরপিও’র অনুচ্ছেদ ৯০জ(১) এর উপদফা ক-চ এর কোনো বিধান লঙ্ঘিত হলে নির্বাচন কমিশন ওই দলের নিবন্ধন বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আরপিও’র অনুচ্ছেদ ৯০(খ) এ একটি দল নিবন্ধন পাওয়ার ক্ষেত্রে যেসব শর্ত পূরণ করতে হয় সেগুলোর উল্লেখ রয়েছে। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে-কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ের কমিটিতে সদস্য নির্বাচিত করা, ২০২০ সালের মধ্যে সব স্তরের কমিটিতে শতকরা ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখা, শিক্ষক বা ছাত্র কিংবা আর্থিক, বাণিজ্যিক বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারী বা শ্রমিক সমন্বয়ে বা অন্য কোনো পেশার সমন্বয়ে সহযোগী বা অঙ্গ সংগঠন থাকবে না। আর আরপিওর ৯০(জ) অনুচ্ছেদে কী কী কারণে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল হবে সেই বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
নিবন্ধন পেতে আবেদন : জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেতে ২০টির বেশি রাজনৈতিক দল আবেদন করেছে। ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত আবেদনের সময় রয়েছে। এ পর্যন্ত আবেদন করা দলগুলোর মধ্যে রয়েছে-বাংলাদেশ এলডিপি, নৈতিক সমাজ, মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ ইত্যাদি পার্টি, নতুন বাংলা, বাংলাদেশ জনমত পার্টি, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ। ইসি সূত্র জানায়, ৩০ অক্টোবর আবেদনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর সেগুলো যাচাই করা হবে। একইসঙ্গে আবেদনের সঙ্গে দেওয়া তথ্যের সঠিকতা মাঠপর্যায়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে। এতে নিবন্ধনের শর্ত পূরন করলে তখন সেই দলগুলোকে নিবন্ধন দেবে কমিশন। জুনের মধ্যে এসব কার্যক্রম শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ইসির।