ইরানের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি পবিত্র শহর মাশহাদে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। এই শহরের জন্ম ও বেড়ে উঠা রাইসি। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার চারদিন পর বৃহস্পতিবার তাকে দাফন করা হয়। আর দাফনের পরদনই প্রকাশ্যে এলো সেই ভয়াবহ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন।
ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে প্রাথমিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। দেশটির আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম শুক্রবার এক প্রতিবেদনে একথা জানান। এতে আরও বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার পর বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি সোমবার সকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
এর আগে রোববার স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদোল্লাহিয়ানসহ আট আরোহী নিয়ে বেল ২১২ মডেলের হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। প্রায় ১৮ ঘন্টা পর দুর্গম পাহাড়ি জঙ্গলের ভেতরে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটির খোঁজ পাওয়া যায়।
আজারবাইজান সীমান্তে দুই দেশের যৌথভাবে নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন রাইসি। সেখান থেকে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে ফেরার পথে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর ব্যাপক অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।
ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর সিনিয়র বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তিবিদের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত দলের প্রাথামিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হেলিকপ্টারটি পুরো পথে তার পূর্বনির্ধারিত রুটে ছিলো এবং ফ্লাইট রুট থেকে বিচ্যুত হয়নি। বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের গায়ে বুলেটের আঘাতে চিহ্ণ বা নাশকতার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুঘটনায় পড়ার প্রায় দেড় মিনিট আগে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের পাইলট অন্য দুটি হেলিকপ্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তবে হেলিকপ্টারে ব্লাক বক্স না থাকার কারণে কী কথা হয়েছিল সেটি জানা সম্ভব হয়নি। পাহাড়ে বিধ্বস্ত হওয়ার পর হেলিকপ্টারটিতে আগুন ধরে যায়।
হেলিকপ্টারটি দুর্গম পাহাড়ে বিধ্বস্ত হলেও ঘন কুয়াশা, ভারী বৃষ্টি আর ঠাণ্ডা তাপমাত্রা উপেক্ষা করেই উদ্ধার অভিযান একটানা চলেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার স্থানীয় সময় ভোর পাঁচটায় ইরানের তৈরি একটি আধুনিক সামরিক ড্রোনের সহায়তায় বিধ্বস্তের সঠিক অবস্থান চিহ্নিত করা হয়।
প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কন্ট্রোল টাওয়ার ও বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের পাইলটের মধ্যে কথোপকথনের মধ্যে সন্দেহজনক কিছু ধরা পড়েনি। আরও তদন্তের পর হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনা নিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে বলে জানিয়েছে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী।
এর আগে ইরানের সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটি খুঁজে পেতে তুরস্ক একটি ড্রোন পাঠিয়েছিলো। এতে নাইটভিশনসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ছিলো। তারপরেও হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের স্থান সঠিকভাবে শনাক্তে ব্যর্থ হয় ড্রোনটি। পরে ড্রোনটি তুরস্কে ফিরে যায়।
শেষ পর্যন্ত, দুর্ঘটনার পরদিন সোমবার ভোরে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর ড্রোন ও স্থলভাগে উদ্ধারকারী বাহিনী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের সঠিক স্থান উদঘাটন করে। সেই ড্রোনটি ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তিতেই তৈরি করা হয়। তবে দ্রুততম সময়ে আধুনিক ড্রোন পাঠানোয় তুরস্কের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানানো হয়েছে।