ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের পর তদন্তকালে তার হাত-পা ধরে মাফ চাচ্ছেন ছাত্রলীগ নেত্রী–এমনটাই দাবি ভুক্তভোগী ছাত্রীর।
নির্যাতনের পর আজ বুধবার মুখোমুখি হয়েছিলেন নির্যাতনের শিকার ছাত্রী এবং অভিযুক্তরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা তদন্ত কমিটির প্রধান রেবা মণ্ডলের কক্ষে একসঙ্গে দেখা যায় তাদের। এ সময় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা বলেছেন, ‘আমার সাথে এ রকম কোরো না। তোমার হাতে-পায়ে ধরে মাফ চাই।’ কক্ষ থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সামনে এমনটাই দাবি করেন ভুক্তভোগী।
আজ তৃতীয়বারের মতো ক্যাম্পাসে এসেছিলেন নির্যাতনের শিকার ছাত্রী। পাবনার নিজ বাড়ি থেকে বাবাকে নিয়ে বেলা ১২টার দিকে ক্যাম্পাস গেটে পৌঁছান তিনি। ক্যাম্পাসে এসে তিন তদন্ত কমিটির কাছে বক্তব্য দেন ভুক্তভোগী। একই সঙ্গে তদন্ত কমিটির ডাকে ক্যাম্পাসে আসেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তাবাসসুম ইসলাম। এ ছাড়াও অভিযুক্ত আরো তিনজনের বক্তব্য শুনেছে তদন্ত কমিটি।
এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের এক কক্ষে নিয়ে বক্তব্য শোনেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবনের তৃতীয় তলায় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডলের কক্ষে তাদের বক্তব্য শোনা হয়।
বক্তব্য প্রদান শেষ করে বের হলে অপেক্ষমাণ গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী দাবি করেন, ভেতরে অভিযুক্তরা তার হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কে কী করেছেন এ বিষয়ে ম্যাম-স্যাররা জানতে চাইলেন। আমি সেটা বলেছি এবং তাদের চিনিয়ে দিয়েছি।’
এ সময় অভিযুক্তরা কিছু বলেছেন কি না, জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, “হ্যাঁ, বলেছেন। অন্তরা আপু বলেছেন, ‘ফুলপরী, আমার সাথে এ রকম কোরো না। তোমার হাতে-পায়ে ধরে মাফ চাই।’ অন্তরা আপু রিকোয়েস্ট করল। কিন্তু আমার সাথে যা যা হয়েছে, সেটাতে আমি অটল ছিলাম।”
তিনি বলেন, ‘আমি তাদের বললাম, কেবল চার-পাঁচ দিন হলো ক্যাম্পাসে এসেছি, কিন্তু আপনারা আমাকে নিয়ে একটুও ভাবেন নাই। আমি এ বিষয়ে আপনাদের সাথে আর কথা বলতে চাই না। প্রশাসন এখন যে ব্যবস্থা নেয়, সেটাই ঠিক।’
ভুক্তভোগী ছাত্রী গণমাধ্যমে কথা বলার সময় ওই কক্ষ থেকে বের হন ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, তাবাসসুম ইসলামসহ অভিযুক্ত পাঁচজন। তারা বের হয়েই দ্রুত বিভিন্ন দিকে চলে যান। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা বিভিন্ন প্রশ্ন করলেও তারা কোনো উত্তর দেননি। শুধু তাবাসসুম ইসলামকে কান্না করার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার চোখ দেখে কি মনে হয় কান্না করেছি?’
এর আগে তদন্ত কমিটির ডাকে গত ১৮ ও ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে আসেন নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী। বারবার ক্যাম্পাসে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ। তবু তদন্তের স্বার্থে আমি প্রভোস্ট স্যারের ডাকে ক্যাম্পাসে এসেছি। যতবার ডাকবে আসব, কিন্তু এর সর্বোচ্চ শাস্তি চাই আমি। আমার সাথে ঘটে যাওয়ার ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না হয়।’
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। তার ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী ও তার অনুসারীরা তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন। এ ঘটনা কাউকে জানালে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। পরে ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় রিট হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।