চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি দিবাগত রাত ৩টার দিকে সাতক্ষীরার দেবহাটা এলাকায় আত্মগোপনে থাকা নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজীর হোসেন নিশিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে রাজধানীর কলাবাগান থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ছাত্রলীগের নেত্রীকে কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। সর্বশেষ তাকে ১৩ আগস্ট ঢাকার নিম্ন আদালতে হাজির করা হয়েছিল নিশিকে। ওইদিনও তাকে আদালত চত্বরে পুলিশ বেস্টনিতে জেকেট ও হেলমেট পরা অবস্থাও বেশ শক্ত মনোবলে কথা বলতে দেখা গেছে।

পদ-পদবি ব্যবহার করে এক সময় ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছিলেন সংগঠনটির নেত্রীরাও। শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, হলে সিট-বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য, ব্ল্যাকমেইলসহ কোনো কিছুতেই পিছিয়ে ছিলেন না তারা। এমনকি জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সময় বৈষ্যম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর গরম পানি নিক্ষেপের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনাও তারা ঘটিয়েছেন, হুমকি দিয়েছিলেন ‘৭ মিনিটে ঢাকা খালি’ করার। এ সবই করেছেন তারা ক্ষমতার মোহে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে।
তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না দাপুটে, মারমুখী নেত্রীদের অনেককেই। বেশিরভাগই চলে গেছেন আত্মগোপনে, কয়েকজন পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে, কেউ বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন।
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে অনেকটাই অভিভাবকহীন হয়ে পড়েন দল ও সংগঠনের নেতা-নেত্রীরা। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ক্ষমতাধর কাউকে।
তাদের মধ্যে বহুল পরিচিত ছাত্রলীগের ক্ষমতাধর দাপুটে নেত্রী হিসেবে পরিচিত বেনজির হোসেন নিশি গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাভোগ করছেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ছাত্রলীগের সভাপতি।
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে নিশির ক্ষমতা ছিল অসীম। অভিযোগ আছে, লেখক ভট্টাচার্য্যের কমিটি বাণিজ্যসহ চাঁদাবাজি থেকে প্রাপ্ত অর্থের বেশ কয়েকজন ক্যাশিয়ারের একজন ছিলেন এই নিশি।
তার ক্ষমতার দাপটে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা থাকতেন তটস্থ। শিক্ষার্থীদের নিকট এক মুর্তিমান আতঙ্কের নাম ছিল নিশি। জোর করে মিছিলে নিয়ে যাওয়া, আবার কাউকে কাউকে জোরপূর্বক বিভিন্ন অবৈধ অ্যাসাইনমেন্টে পাঠানো ছিল তার অন্যতম নিয়মিত কাজ। নির্দেশ না মানলে নেমে আসতো অমানুষিক জুলুম-নির্যাতন আর গালিগালাজ। তার নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি নিজ দলের নেতাকর্মীরাও।
সাবেক সংসদ সদস্য ও শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) সাইফুজ্জামান শিখরের জেলার বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে সংগঠনের তৃণমূলেও তিনি প্রভাব বিস্তার করতেন। নিজ সংগঠনের কয়েকজন নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়। তিনি ও তার সহযোগীরা ২০২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়ার সময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ইয়াসিনের মাথা ফাটিয়ে আলোচনায় আসেন নিশি। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়।
এখানেই শেষ নয়। নিশির হামলার শিকার হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে ছিলেন রোকেয়া হলের নেত্রী ফাল্গুনী দাস তন্বী। তন্বীর মামলাও এখন চলমান।
কারাবন্দি নিশি তার ফেসবুক প্রোফাইলে এখনো সক্রিয়, তার নামের ওইসব আইডি ও পেইজ থেকে অজ্ঞাত স্থান থেকে দেওয়া হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার, বিএনপি-জামায়াত ও এনসিপি বিরোধী নানা পোস্ট।
মঙ্গলবার তার ফেসবুকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারের কঠোর সমালোচনা করেন এবং তারেক রহমানের প্রতি বেশ কিছু প্রশ্ন রাখেন।
এর আগে ৫ অক্টোবর নিশি তার ফেসবুকে লেখেন, দিন যতই যাচ্ছে দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে বিমানবন্দরে রিসিভ করার লোক সংখ্যা ততই দ্বিগুণ হচ্ছে।
একই দিনে আরেক স্ট্যাটাসে নিশি লেখেন- ‘জয় বাংলা বিজয় এর হাসি আমরাই হাসবো।’
গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলকে ব্যঙ্গ করে এক পোস্টে লিখেছিলেন- ‘হায় আল্লাহ, আমি যদি কোনোদিন প্রেমিক হওয়ার সুযোগ পেতাম, আমি জানি না কখনও হতে পারব কি না! যদি হতাম, জীবন দিয়ে প্রেম করতাম, খালি মেয়েদের হৃদয় জয় করার জন্য।—জনৈক ছাত্রীবান্ধব শিক্ষক, ট্রিপল বিয়ে।’












The Custom Facebook Feed plugin