বিএনপি ছাড়া নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা পাবে না বলে দাবি করেছেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যরা। তারা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকার সরকারের দাবি জানিয়েছেন। জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কেয়ারটেকার প্রশ্নে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বাইরে এক সুতাও ছাড় হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বাজেট পাশের প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তারা। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রস্তাবিত বরাদ্দের ওপর আনীত ছাটাই প্রস্তাব নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, গণফোরাম ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা আলোচনা করেন। তারা নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না বলে দাবি করেন। একইসঙ্গে কেয়ারটেকার সরকারের দাবি জানান।
বক্তব্যের জবাবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিএনপি কি পাকিস্তানে থাকে, তাদেরকে নির্বাচনের জন্য হাত ধরে ডেকে আনতে হবে। তাদের দাবি অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আইন হয়েছে। এখন কেয়ারটেকার সরকারের দাবি করছে। কিন্তু এই প্রশ্নে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বাইরে এক সুতাও ছাড় দেওয়া হবে না। দেশের সর্বোচ্চ আদালত কেয়ারটেকার সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নিয়েছেন। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সিইসি ও চারজন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, বিএনপিদলীয় দুইজন সংসদ সদস্য বিগত নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অথচ তারাই ওই নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে এই সংসদে এসেছেন। তারা এই সংসদে নিয়মিত কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আমেরিকাসহ বিশ্বের কোথাও বলার সুযোগ নেই শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কিন্তু বাংলাদেশে ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে আনিসুল হক বলেন, জিয়াউর রহমানের আমলে হ্যাঁ-না ভোট দেখেছি। প্রেসিডেন্ট পদে ৯৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু কাউকে ভোট কেন্দ্রে যেতে হয়নি। বিএনপি আমলে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কথা সবাই জানেন। মাগুরার উপনির্বাচনেও কী হয়েছে- তা সবার জানা আছে। তাদের সময়ে জাস্টিস আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন আমরা দেখেছি। এই সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে বলে তিনি দাবি করেন।
এর আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই। নির্বাচনী ইনস্টিটিউশনগুলো যদি শক্তিশালী না হয়, নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি যদি জনগণের আস্থা-বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়, সেই দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, বিগত দশ বছরে নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এখন নির্বাচন করে না। নির্বাচন করে স্থানীয় পর্যায়ের প্রশাসন ও জনপ্রশাসনের ব্যক্তিরা। সার্চ কমিটির মাধ্যমে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা তো এই গ্রহেরই মানুষ, অন্য গ্রহ থেকে তো নিয়ে আসেননি। তাই সংকট সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।
হারুন বলেন, বর্তমান ইসি বলছে ইভিএম’র ভোট কক্ষে যে ডাকাত থাকে সেটি ধরাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের যদি সদিচ্ছা না থাকে কোনোভাবেই নির্বাচন সঠিক করতে পারবেন না। আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল ইভিএম চাচ্ছে না। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ চাচ্ছে ইভিএম। প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালে যখন আন্দোলন করেছেন, তখন তিনি বলেছেন আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। আজকে বিএনপিকে ছাড়া কি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে? হবে না। আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে কীভাবে নির্বাচনে আনবেন সেটিই বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আসতে হবে।