সরকারি চাকরির সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করে সংসদে আইন পাসের দাবিতে আগামী রোববার (১৪ জুলাই) বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা করবেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে তারা রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন বরাবর স্মারক লিপি দেবেন।
শনিবার (১৩ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, কোটা বৈষম্য নিরসন করে সংসদে আইন পাসের লক্ষ্যে জরুরি অধিবেশন আহ্বান করে আগামী রোববার বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে। পদযাত্রাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে বেলা সকাল ১১টায় শুরু হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজসহ ঢাকাস্থ প্রতিষ্ঠানগুলো পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করবে।
একই সময় অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজ নিজ জেলা প্রশাসন কার্যালয় অভিমুখে গণপদযাত্রা করবে এবং জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেবে।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকারের উচিত ছিল আমাদের সঙ্গে আলোচনা করা। তা না করে সরকার আন্দোলন দমনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দাবি আদায় না হলে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
ধর্মঘট চলবে
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে যে ছাত্র ধর্মঘট ঘোষণা করেছি, তা চালু থাকবে। শিক্ষকরা আন্দোলন শেষে ক্লাসে ফিরে গেলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরব না।
সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, শিক্ষকরা যখন আন্দোলন করে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব দাপ্তরিক কাজ বন্ধ করে দিয়েছে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে গিয়ে বসে যায়নি। তারা শিক্ষকদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছে। এখন সময় এসেছে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে পাশে থাকার।
মামলা প্রত্যাহারের দাবি
১২ জুলাই শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচি চলাকালীন পুলিশের যানবাহন ভাঙচুর, পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা এবং মারধরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা শিক্ষার্থীদের আসামি করে শাহবাগ থানায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের পরিবহন বিভাগের গাড়িচালক খলিলুর রহমান।
মামলাটির কথা উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, আন্দোলনকে বাধা দিতে ‘মিথ্যা’ মামলাটি দেওয়া হয়েছে। শাহবাগে দায়িত্বরত পুলিশরাও কোনো মারধরের বর্ণনা দেয়নি। এ সময় শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমকে দেওয়া রমনা জোনের এডিসি শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম একটি সাক্ষাৎকার উল্লেখ করেন।
যেখানে শাহবাগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে এডিসি বলেন, শিক্ষার্থীরা ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ের দিকে এগোনোর চেষ্টা করেছিল। তবে বলার পর তারা আমাদের কথা শুনে শান্তিপূর্ণভাবে ফিরে গেছে। আপনারা দেখেছেন, আমরা চেষ্টা করেছি যেন কোনো শিক্ষার্থীর গায়ে আঘাত না লাগে। আমাদের সাঁজোয়া যান ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছে। এখানে কোনো ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, অজ্ঞাতনামা মামলা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারা আন্দোলনে সমন্বয় করছে, সবার পরিচয় আছে। আমাদেরকেই মামলা দিন।
এদিকে দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গণসংযোগ ও বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারীরা।
সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আজকে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারীরা অফলাইনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজ ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। কুমিল্লা জেলা পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা দুই ঘণ্টার বৈঠক করেন।