সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

ক্যাসনো সম্রাটের কোনো মামলারই বিচার শুরু হয়নি

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে ১৩ জনের বিরুদ্ধে মোট মামলা ৫৭। অভিযোগপত্র দেওয়া হয় ৫২টির। রায় হয়েছে একটির।

■ সম্রাটের চার মামলার তিনটিতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

■ মানি লন্ডারিং মামলার তদন্তই শেষ করতে পারেনি সিআইডি।

■ সম্রাটের সহযোগী খালেদের মামলারও অগ্রগতি নেই।

যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটের চারটি মামলার কোনোটিরই বিচার শুরু হয়নি। তবে তিনটি মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও আরেকটি মামলার তদন্তই শেষ হয়নি।

ক্যাসিনোবিরোধী র‌্যাবের অভিযানে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে সম্রাট ও তাঁর সহযোগী এনামুল হক ওরফে আরমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই অভিযানে যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, বিতর্কিত ঠিকাদার জি কে শামীমসহ মোট ১৩ জন গ্রেপ্তার হন।

চলতি বছরের ১০ এপ্রিল থেকে ১১ মের মধ্যে চার মামলায় জামিন পান সম্রাট। তবে এক সপ্তাহ পর ১৮ মে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় হাইকোর্ট জামিন বাতিল করে তাঁকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। সর্বশেষ ২২ আগস্ট তিনি এই মামলায় জামিন পান। এরপরও তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন। গতকাল শুক্রবার তিনি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসেন। এ সময় তিনি সমর্থকদের নিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরসহ বিভন্ন এলাকায় মহড়া দেন। এতে ছুটির দিনেও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজট দেখা দেয়।

সম্রাটের চার মামলা

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর গ্রেপ্তারের পর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সম্রাট ও তাঁর সহযোগী আরমানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা করে পুলিশ। এ ছাড়া মানি লন্ডারিং আইনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করে।

পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, মানি লন্ডারিং ছাড়া বাকি তিনটি মামলায় সম্রাটের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তবে একটি মামলারও অভিযোগ গঠন হয়নি। অবশ্য গ্রেপ্তারের দিন বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন।

শাহজাহানপুর কলোনি মাঠ, মেরাদিয়া ও কমলাপুর কোরবানির হাট নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

মানি লন্ডারিং আইনে করা মামলার তদন্ত করছে সিআইডি। তদন্ত–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সম্রাটের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ১৯৮ কোটি টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে। হুন্ডির মাধ্যমে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় পাচার করা টাকার বড় অংশই তিনি সিঙ্গাপুরে ক্যাসিনোতে খরচ করেন। ২০১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত তিনি শুধু সিঙ্গাপুরেই গেছেন ৩৫ বার। একই সময়ে তিনি মালয়েশিয়ায় গেছেন তিনবার।

মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. হুমায়ুন কবির  বলেন, সম্রাটের পাচার করা অর্থের বিষয়ে তথ্য চেয়ে গত বছরের অক্টোবরে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠির জবাব না পাওয়ায় তাঁরা মামলার অভিযোগপত্র জমা দিতে পারছেন না।

ভবন দখল, অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ

রাজধানীর কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টার দখল করে নিজের ও যুবলীগ দক্ষিণের কার্যালয় বানান সম্রাট। সেখান থেকে অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট স্বীকার করেন, ‘গডফাদারদের’ পক্ষে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও তদবির করলেও একসময় তিনি নিজেই রাজনৈতিক পর্যায়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার প্রধান নিয়ন্ত্রক ছিলেন তিনি। পাশাপাশি মার্কেট ও ফুটপাতে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ করে তিনি প্রতিদিন প্রায় এক কোটি টাকা পেতেন।

র‌্যাব ও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট বলেন, ছয়টি ক্যাসিনোর একেকটি থেকে প্রতি সপ্তাহে ১০ লাখ করে ৬০ লাখ টাকা পেতেন। তৎকালীন একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও খালেদ মাহমুদ তাঁর জন্য চাঁদা তুলতেন। এসব টাকার হিসাব রাখতেন তাঁর সহযোগী আরমান।

জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট র‌্যাব ও পুলিশকে কয়েকজন নেতার নাম উল্লেখ করে বলেন, ক্যাসিনো পরিচালনা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ এসব নেতা তাঁকে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিতেন।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান ও ৫৭ মামলা

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে সম্রাট, আরমান, খালেদ মাহমুদ, জি কে শামীম ছাড়াও অনলাইন ক্যাসিনো কারবারি সেলিম প্রধান, মোহামেডান ক্লাবের তৎকালীন ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ওরফে মিজান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর ময়নুল হক ওরফে মনজু, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান ওরফে রাজীব, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের কর্মকর্তা ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা কাজী শফিকুল আলম ওরফে ফিরোজ এবং যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের বছর জানুয়ারিতে গ্রেপ্তার করা হয় গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতা দুই ভাই এনামুল হক ওরফে এনু ও রুপন ভূঁইয়া।

সম্রাটসহ গ্রেপ্তার এই ১৩ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ, র‌্যাব ও দুদক মোট ৫৭টি মামলা করে। এর মধ্যে অস্ত্র, মাদক, বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ, বিশেষ ক্ষমতা ও মানি লন্ডারিং আইনে ৩৪টি মামলা করে পুলিশ ও র‌্যাব। এ ছাড়া অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক বাদে বাকি ১২ জনের বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা করে দুদক।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), র‍্যাব ও ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তদন্ত শেষে ৫২টি মামলার অভিযোগপত্র দেয়। সম্রাট ও খালেদের মানি লন্ডারিংয়ের দুই মামলা সিআইডি এবং এনু ও রুপনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তিনজনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তিন মামলা তদন্ত করছে দুদক।

দুই ভাই এনু ও রুপনের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে দুই দফা অভিযান চালিয়ে নগদ প্রায় ৩২ কোটি টাকা, ৯ কেজি সোনা এবং ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) ও একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলাগুলোর অবস্থা জানতে গত রোববার যোগাযোগ করা হলে দুদকের বিশেষ মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব  বলেন, সম্রাট, জি কে শামীম, খালেদ, এনু, রুপন ভূঁইয়াসহ তাঁদের ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের ২৩ মামলার মধ্যে ২০টির অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি তিন মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে।

সম্রাটের হয়ে ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করতেন খালেদ

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথম গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ। তিনি সম্রাটের হয়ে ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করতেন। ইয়ংমেন্স ক্লাবসহ মতিঝিলে চারটি ক্লাবে ক্যাসিনো পরিচালনার পাশাপাশি সরকারি সাতটি প্রতিষ্ঠানে টেন্ডারবাজি করতেন খালেদ। শাহজাহানপুর কলোনি মাঠ, মেরাদিয়া ও কমলাপুর কোরবানির হাট নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

মানি লন্ডারিং, অস্ত্র ও মাদক আইন এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে খালেদ মাহমুদের বিরুদ্ধে মোট সাতটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, চারটির অভিযোগ গঠন হয়েছে। মানি লন্ডারিং আইনে করা মামলার এখনো তদন্ত শেষ হয়নি।

এনু ও রুপনের এক মামলায় সাজা

দুই ভাই এনু ও রুপনের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে দুই দফা অভিযান চালিয়ে নগদ প্রায় ৩২ কোটি টাকা, ৯ কেজি সোনা এবং ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) ও একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

মানি লন্ডারিং আইন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মোট সাতটি মামলা হয়। গত বছরের ২৫ এপ্রিল অর্থ পাচার মামলায় তাঁদের ১১ বছর করে কারাদণ্ড হয়েছে। বাকি ছয়টি মামলার অভিযোগই গঠন হয়নি।

বিচারকাজে ধীরগতি

৫৭ মামলার মধ্যে ৫২টি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে ধীরগতিতে। বেশির ভাগ মামলার অভিযোগই গঠন হয়নি।

অভিযোগ গঠন দেরি হচ্ছে কেন, এমন প্রশ্নে গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (চিফ পিপি) আবদুল্লাহ আবু  বলেন, অভিযোগপত্র দাখিলের পর বিচারের জন্য মামলা বিভিন্ন আদালতে স্থানান্তর করা হয়। খোঁজখবর নিয়ে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!