খুলনায় বিএনপির মহাসমাবেশ ভণ্ডুল করতে সরকার শুধু গণপরিবহনই বন্ধ করে দেয়নি, সেই সঙ্গে নেতাকর্মীদের ব্যাপকভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পাশাপাশি তিনি হুশিয়ারি দিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঘটলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।
শনিবার খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ। কিন্তু গেলো দু’দিন ধরেই খুলনা বিভাগে বাস-লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। মহাসড়কে তিন চাকার বাহন বন্ধের দাবিতে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের সংগঠনগুলো এই ধর্মঘট পালন করছে। তবে, বিএনপির দাবি তাদের নেতাকর্মীরা যাতে খুলনার সমাবেশে যোগ দিতে পারে সে জন্যই এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক একদিকে বলছেন বিএনপির কর্মসূচিতে কোন বাধা দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। তাঁর দাবি সমাবেশ ঠেকাতেই যানবাহন বন্ধ করা হয়েছে। পুলিশ গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনভীতি রোগে ভুগছে। সরকার জনগণকে ভয় পায় বলেই বিএনপির সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করছে। খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে বাধা দিয়ে সরকার পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, তিনি বলেন, তাদের ‘পিপলস ফোবিয়া’ রোগ হয়েছে। মানুষ দেখলেই ভয় পায়। যে কারণে তারা নির্বাচনগুলো ওইভাবে করে যাতে করে জনগণকে বাদ দিয়ে করা যায়। সেই পদ্ধতিতে তারা মানুষকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্র চালাতে চায়।
‘ব্ল্যাক আউট বাংলাদেশ: লুটেরা আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ খাতকে বিলিয়নিয়ার তৈরির কারখানায় পরিণত করে অর্থনীতি ও জনজীবন সংকটাপন্ন করে তুলেছে’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, শনিবার খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশ। এই গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করা হয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা রামদা, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন। বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, খুলনায় গণসমাবেশ আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যে বাসায় উঠেছেন, সেখানে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ রেড দিয়েছে। সেখান থেকে দলের ১৯ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ক্ষমতাসীনদের ভয় কিসের- এমন প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, কি কারণে তারা সমস্ত কিছু বন্ধ করে দিয়ে সমাবেশগুলো বন্ধ করতে চাচ্ছে। একটাই তো কারণ। মানুষ যদি বাড়তে থাকে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে না। জনগণের উত্তাল তরঙ্গে তাদের ভেসে যেতে হবে। এভাবে যদি জনগণ জেগে ওঠে, গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে তখন তাদের অত্যন্ত ধিকৃত অবস্থায় সরে যেতে হবে। এটাই তাদের ভয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার সব কিছু করতে চায় মানুষকে বাদ দিয়ে। তারা রাষ্ট্র চালাতে চায় মানুষকে বাদ দিয়ে। তারা নির্বাচন করতে চায় জনগণকে ছাড়া। জনগণ জেগে উঠলে ক্ষমতা ছাড়তে হবে— তারা সারাক্ষণ এই ভয়ে থাকে। এই সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্য বিএনপির মহাসচিব বলেন, খুলনায় নিশ্চয় আপনাদের প্রতিনিধিরা আছেন তাদের কাছ থেকে জানতে পারবেন। আজকের পত্র-পত্রিকায় রিপোর্ট আপনারাই করেছেন যে, কিভাবে তারা একটা ‘রেইন অব টেরর’ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। এটা তারা ময়মনসিংহে করেছিলো, চট্টগ্রামে করেছিলো। কিন্তু কিছু করতে পারেনি।
সরকার বিএনপির সমাবেশে বাধা তো দেয়ইনি; বরং প্রশাসনিক সহযোগিতা দিচ্ছে— শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যের জবাব দেন মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটি আওয়ামী লীগের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। তারা মুখে বলবে এক আর কাজ করবে আরেক।
দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনার কারণেই দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা নিশ্চয় অমর্ত্য সেনের বইটা পড়েছেন। যেখানে উনি ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের পর্যালোচনা করতে গিয়ে স্পষ্ট করেই বলেছেন, ’৭৪ সালে দুর্ভিক্ষটা ছিলো মানবসৃষ্ট, মানুষদের দ্বারা তৈরি করা।
কৃষকদের স্বর্ণপদক দেয়া উচিত জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমাদের তো বাংলাদেশের কৃষকদের প্রত্যেককে একটা করে সোনার মেডেল দেওয়া উচিত। তারা দিবারাত্র পরিশ্রম করে যে ফসল ফলায় তার জন্য বাংলাদেশের মানুষ কোনো রকমের খেয়ে বেঁচে থাকে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল মাহমুদ টুকু বলেন, উৎপাদন ও সঞ্চালন ব্যবস্থার কোন উন্নতি না করে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করা হয়েছে। এমন ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগ করা উচিত। সরকারের মদতেই কিছু কোম্পানি ক্যাপাসিটি চার্জের নামে ৯০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা।