সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

গণঅনশনে জবি শিক্ষার্থীরা, কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

দাবি আদায়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার কাছে কাকরাইল মসজিদ মোড়ে গণঅনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে অনশন শুরু করেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচি শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন শিক্ষক সমিতির মুখপাত্র ও ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মঞ্জুর মোর্শেদ ভূইঁয়া।

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ক্যাম্পাস থেকে এসেছি, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে ফিরব না। এই মুহূর্ত থেকে আমাদের গণঅনশন শুরু হলো।’

বিকেল তিনটায় সমাবেশে জবি ঐক্যের পক্ষ থেকে একই ঘোষণা দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহতাব লিমন। তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলন এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছে যে, আমাদের আর পেছনে ফেরার জায়গা নেই। আমরা বিকেল সাড়ে তিনটায় অনশন কর্মসূচি শুরু করব। বিজয় না নিয়ে আমরা ফিরছি না।

চার দফা দাবিতে কাকরাইল মোড়ে জুমার নামাজের পর তৃতীয় দিনের মতো সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর আগে দুপুর ২টার দিকে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।

গণঅনশন সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন। স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়েছে কাকরাইল মসজিদ মোড়। সাবেক-বর্তমান মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন সমাবেশে। তবে এখনও পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়ার চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে এই সরকারের কিসের এত সমস্যা। এই দাবি আদায় করতে গিয়ে আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এমনকি সাংবাদিকরাও আহত হয়েছেন। জাতীয় বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ আমাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছেন। কিন্তু এই সরকারের আমাদের রক্তের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিতি হয়েও তারা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার মেনে নিতে চাইছেন না।

শুক্রবার সকাল থেকে দাবি আদায়ের আন্দোলনে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে সমাবেশে দলে দলে যোগ দেন জবির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন বিভাগের অ্যালামনাই কমিটি ও নানা জায়গায় অবস্থান করা সাবেক জবিয়ানরা সমাবেশে যোগ দেন।

তারা বলছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নে আমরা আপসহীন। আগেও অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করা হয়েছে, এখনও হচ্ছে। কোনো পার্থক্য নাই। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার করতে হবে।

সাবেক জবিয়ানদের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সমাবেশে পানি, কেক, কলাসহ নাস্তা সরবরাহ করা হচ্ছে। ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন বৃত্তি, পূর্ণাঙ্গ বাজেট, দ্বিতীয় ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন এবং শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার তদন্ত ও বিচার দাবিতে আন্দোলন করছেন জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাস থেকে আনা হয় বাস: চলমান আন্দোলনের তৃতীয় দিন আজ শুক্রবার সকাল থেকে ৫০টির মতো বাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কাকরাইলের সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক ড. তারেক বিন আতিক জানান, এখন পর্যন্ত ১০টা বাস ছাড়া হয়েছে ক্যাম্পাস থেকে। সর্বশেষ ১১টা ২০ মিনিটে একটি বাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাকরাইলের উদ্দেশে ছাড়া হয়েছে। তিনি বলেন, বাসের অনেক ড্রাইভার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী নামাজের আগে ও পরে বাস ছাড়া হবে ক্যাম্পাস থেকে।

বৃহস্পতিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে ‘জবি ঐক্যের’ পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছউদ্দীন আজকের কর্মসূচির ঘোষণা দেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কাকরাইল মোড়েই অবস্থান করবেন শিক্ষার্থীরা, এ ঘোষণা দেন। নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে বলেন, দাবি আদায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শুক্রবার জুমার নামাজের পর গণঅনশন শুরু করবে। এতে সকল সাবেক ও বর্তমান জবিয়ানদের অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া আন্দোলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে ১৪ মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কালো দিবস পালনের ঘোষণা দেন তিনি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য শাটডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

অধ্যাপক রইছউদ্দীন বলেন, ‘আমরা অধিকার জানাতে এসেছি। আমাদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে পুলিশ। এটি অরাজকতা ও অন্যায়। দাবি আদায় না করে আমরা ঘরে ফিরব না।’ ১৪ মে কালো দিবস পালনের ঘোষণা দেন তিনি।

আগের দিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কাকরাইল মোড়ে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। অন্তত ৩০টি বাসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগ দেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্দোলনের কারণে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে শিক্ষার্থীরা অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যান চলাচলের ব্যবস্থা করে দেন।

আন্দোলনের মধ্যে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার। তবে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। পরে বিকেলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ। এ বৈঠকের বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমরা দিনের পর দিন আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদের দাবি মেনে নিতে হবে। হল, আবাসন আমাদের অধিকার।

আব্দুল আলিম আরিফ বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করা হয়েছে, হামলা চালানো হয়েছে, এটা অন্যায়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবি অতিদ্রুত মেনে নিতে হবে। আমরা ভিক্ষা চাইতে আসিনি। অধিকার আদায়ে এসেছি। রক্তচক্ষু দেখাবেন না আমাদের।

বুধবার বেলা পৌনে ১২টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে রওয়ানা হয়। পদযাত্রা প্রথমে গুলিস্তান মাজার গেটে বাধার মুখে পড়েন। পরে মৎস ভবনে ফের পুলিশের বাধা অতিক্রম করে যমুনা অভিমুখে এগিয়ে যেতে থাকেন জবি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং মোড়ে যেতেই অতর্কিত টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, গরম পানি নিক্ষেপ করতে শুরু করে পুলিশ। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হন। এরপর রাতে আলোচনার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম এবং ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমিন  শিক্ষা উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাসায় দীর্ঘসময় মিটিং করলেও কোনো সমাধান আসেনি।

শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবিগুলো হলো- আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন এবং শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী পুলিশদের বিচারের আওতায় আনা।

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!