দীর্ঘ ১৫ মাস পর গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে হামাস ও ইসরাইল। আগামী রোববার থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাতে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল-থানি দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও যুদ্ধবিরতির কথা নিশ্চিত করেছেন। এই চুক্তির আওতায় গাজায় সংঘাত বন্ধের পাশাপাশি উপত্যকাটিতে হামাসের হাতে বন্দী জিম্মিদের মুক্তির পথও খুলবে।
একের পর এক বৈঠক, বিশ্ব নেতাদের কথার লড়াই আর আশ্বাসের ফুলঝুরি। এরপরও হতাশাই ছিল যেন সঙ্গী। তবে এবার ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে উঁকি দিলো আশার আলো। গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা নজিরবিহীন সহিংসতা এবং এতে ৪৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানির পর যুদ্ধবিরতিতে একমত হলো হামাস ও ইসরাইল।
চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার এ ঘোষণা দেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল-থানি। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস জানিয়েছে, তাদের প্রতিনিধিরা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির এই চুক্তিতে অনুমোদন দিয়েছেন।
দীর্ঘ কয়েক মাস আলোচনার পর এই চুক্তিতে পৌঁছালো উভয় পক্ষ, যার অন্যতম মধ্যস্থতাকারী ছিলো কাতার।
আলোচনার সাথে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বিবিসিকে বলেছে, কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সাথে হামাস এবং ইসরাইলের মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে আলাদা বৈঠকের পর উভয় পক্ষ গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তি দেয়ার বিষয়ে চুক্তিতে সম্মত হয়েছে।
হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে নিজের জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজের একটি বলে মন্তব্য করেছেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তিনি বলেন, এটি আমার জীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন আলোচনার মধ্যে একটি। আমার এবং নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিনিধিরা চুক্তিতে পৌঁছার জন্য ‘এক দল’ হিসেবে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তি হয়েছে, তারা শিগগিরই মুক্তি পাবে।
চুক্তির আওতায় প্রাথমিকভাবে ছয় সপ্তাহের পর্যায়ক্রমিক যুদ্ধবিরতি করা এবং গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার করাসহ ইসরাইলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে, হামাসের হাতে বন্দি ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। রোববার প্রাথমিকভাবে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। এর মধ্যে কয়েকটি ধাপে নানা শর্ত বাস্তবায়ন করা হবে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের রাস্তায় ফিলিস্তিনিদের উচ্ছ্বাস করতে দেখা যায়। মধ্য গাজার দেইর-আল বালাহতে ফিলিস্তিনিরা উল্লাসে মেতে উঠেন। অন্যদিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির খবরে তেল আবিবে জিম্মিদের স্বজনদের উল্লাস করতে দেখা গেছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে আটক হওয়া প্রায় ১০০ জন জিম্মিকে ফিরিয়ে দেবে ফিলিস্তিন। বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেবে ইসরাইল। প্রথম ধাপে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। ওদিকে এর বিনিময়ে এক হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল।
ইসরাইলের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা গাজার সীমান্তবর্তী দক্ষিণ ইসরাইলে হামলা চালিয়ে ১২০০ জনকে হত্যা ও ২৫০ জনেরও বেশি লোককে জিম্মি করে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই দিন থেকেই ইসরাইলি বাহিনী গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে এ পর্যন্ত ৪৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।