মঙ্গলবার , ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. London Mirror Specials
  2. অন্যান্য
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খুলনা
  6. খেলা
  7. চট্রগ্রাম
  8. জেলার খবর
  9. ঢাকা
  10. তথ্য-প্রযুক্তি
  11. প্রবাসের কথা
  12. বরিশাল
  13. বাংলাদেশ
  14. বিনোদন
  15. ব্যাবসা-বাণিজ্য

চট্টগ্রাম মেডিকেলে ছাত্রলীগের নির্যাতন‘ ‘আমাকে বেঁধে মুখে পানি ঢালতে থাকে, এতে নিশ্বাস বন্ধের অবস্থা হয়’

প্রতিবেদক
Newsdesk
ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩ ১২:২০ পূর্বাহ্ণ

টিউশনি থেকে আসছি বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ক্রিকেটের স্টাম্প দিয়ে আঘাত করে ইমতিয়াজ আলম। তারপর আমাকে বেঁধে ফেলে এবং সে অবস্থায় মুখে পানি ঢালতে থাকে। একপর্যায়ে নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে পানি ঢালা বন্ধ করে। এরপর তালিকা ধরে কয়েকজনের নাম বের করে বলে, আমরা কোথাও (রেটিনা কোচিং সেন্টার) ক্লাস নিই কি না? আমি আমারটা উত্তর দিলাম, না। অন্যদেরটা জানি না। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় স্টাম্প, প্লাস্টিকের পাইপ, কাঠের তক্তা এসব দিয়ে মারপিট। একপর্যায়ে মাটিতে শুয়ে পড়লে দুই মিনিট চেয়ারে বসিয়ে পানি খাওয়ানো হয়। এরপর আবার জয়েন্টগুলোতে স্টাম্প দিয়ে আঘাত করতে থাকে।’

নির্যাতনের এই বর্ণনা দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সাকিব হোসেন। গত বুধবার রাতে কলেজের প্রধান ছাত্রাবাসে সাকিবের সঙ্গে আরও তিন ছাত্রকে নির্যাতন করেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা।

সাকিব হোসেন ও নির্যাতনের শিকার জাহিদ হোসেন আজ সোমবার লিখিতভাবে কলেজ অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার বরাবর অভিযোগ করেছেন। দুজনই এখন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।

‌‌দুই শিক্ষার্থীই জানিয়েছেন, ‘বড় ভাইয়া’ ডাকছে বলে তাঁদের ছাত্রাবাসের তিনতলার ১৭/সি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। পৃথক হাতে লেখা ছয় পৃষ্ঠা করে ১২ পৃষ্ঠার অভিযোগে নির্যাতনের কারণ হিসেবে একই শ্রেণির সহপাঠীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের পাশাপাশি ইসলামী ছাত্রশিবির পরিচালিত রেটিনা কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেওয়ার বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। ওই কোচিংয়ে ক্লাস নেন না বলার পর তাঁদের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। ২০ থেকে ২২ জন তাঁদের মারধরে অংশ নেন।

নির্যাতনের কথা বাইরে প্রকাশ না করার হুমকি এবং হাসপাতালে গিয়ে পুনরায় মর্গে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকির কথা উল্লেখ রয়েছে লিখিত অভিযোগে। চট্টগ্রাম মেডিকেলের ৬২ ব্যাচের এই দুই ছাত্রই তাঁদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির পাশাপাশি পড়ালেখা শেষ করার নিশ্চয়তা চেয়ে নিরাপত্তার দাবি জানান।

মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীরা গত বুধবার রাতে প্রধান ছাত্রাবাসে সাকিব ও জাহিদ ছাড়াও আবু রাইয়াত ও মোবাশ্বির হোসেনকে পর্যায়ক্রমে নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ। দুজনের লিখিত অভিযোগে যাঁদের নাম এসেছে তাঁদের মধ্যে অভিজিৎ দাশ, জাকির হোসেন, ইমতিয়াজ আলম, রেয়াজুল ইসলাম, সাজু দাশ, সৌরভ ও আকাশ অন্যতম।

রাত সাড়ে ১২টায় প্রথম ডাক পড়ে বাঁশখালীর ছেলে সাকিব হোসেনের। জাকির হোসেনসহ কয়েকজন সাকিবকে তাঁর ৩/সি কক্ষে গিয়ে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে যান। রাত আড়াইটার দিকে একই ব্যক্তিরা জাহিদকে রুম থেকে ডেকে নিয়ে যান। পরে অপর দুজনের ডাক পড়ে বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

জাহিদ হোসেন অভিযোগে বলেন, ‘তাঁরা আমার মোবাইল ফোনটি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করেন। আর কয়েকজন আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, আমি সাকিবের সঙ্গে কোথাও ক্লাস নিতে যাই কি না। আমি জবাবে না বলার সঙ্গে সঙ্গে বলে, তুই যাস। আর কে কে যায় বল। বলেই স্টাম্প, পাইপ ও লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে চোখ বেঁধে ফেলে। তারপর উপর্যুপরি কিল–ঘুষি মারতে থাকে।’

এরপর সাকিব ও জাহিদকে মুখোমুখি করেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। চড়–থাপ্পড় দিতে থাকে। এরপর ফজরের নামাজের সময় জাহিদকে অন্য একটি কক্ষে (১৯/এ) নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর কাউকে না বলার হুমকি দেওয়া হয়।

জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ওই কক্ষে আমাকে ধমক দিয়ে শুইয়ে দেয়। এ সময় আমার পিঠ, হাত, পা ব্যথা করছিল খুব। আমি গোঙাতে থাকি। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার বেলা দুইটা পর্যন্ত দুবার তাদের কাঁধে ভর দিয়ে বাথরুমে যাই। পরে আমাকে আমার রুমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বলে দেওয়া হয়, আজকের ঘটনা জানাজানি হলে বেঁচে থাকা দায় হয়ে যাবে। রুমে ফেরার পর কথা বলার শক্তিও ছিল না। পরে সন্ধ্যায় পুলিশ ও শিক্ষকেরা আমাদের হাসপাতালে পাঠান।’

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক