প্রতি বছর ঘুরেফিরে আলোচনায় আসে চাল সংকট। দেশে মানুষের খাবারের জন্য বর্তমানে চালের চাহিদা বছরে তিন কোটি টনের কিছু বেশি। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, এই চাহিদার তুলনায় দেশে চালের উৎপাদন বেশি। অথচ ‘সংকট’ দেখিয়ে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে আমদানি করা হচ্ছে কয়েক লাখ টন চাল। মিলাররা বলছেন, চাল বছরের পর বছর মজুত করে রাখার জিনিস নয়, সংকট যদি না থাকবে তাহলে উৎপাদিত চাল যায় কোথায়?
তথ্য বলছে, টানা কয়েক বছর দেশে চাহিদার চেয়ে বেশি চাল উৎপাদন হচ্ছে। গত অর্থবছর (২০২১-২২) দেশে চালের উৎপাদন ছিল তিন কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার টন। চলতি মৌসুমেও উৎপাদন হচ্ছে এর কাছাকাছি। সে অনুযায়ী দেশে বছরে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকার কথা। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। চাল সংকট আমাদের নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাহিদা মেটাতে আমদানির জন্য মরিয়া সরকার। বেসরকারি খাতকেও নানান সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে চাল আমদানির জন্য।
কৃষি গবেষক ও অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উৎপাদন ও চাহিদা নিয়ে যে তথ্য দেয় সেটা অনেক সময় মেলে না। আবার তাদের তথ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে বড় ধরনের ফারাক দেখা যায়। যে তথ্য দেওয়া হয় তা সামঞ্জস্যহীন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. এম আসাদুজ্জামান বলেন, দেশে খাদ্য সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্তে গরমিল আছে। মন্ত্রীরাও একেকজন একেক রকম তথ্য দেন। তাদের দপ্তরেও মেলে আলাদা আলাদা তথ্য।
তিনি বলেন, দুঃখজনক যে, মোটাদাগের জিনিসগুলোর তথ্যে আগে কিছুটা সামঞ্জস্য ছিল। এখন তাও নেই। চালের তথ্য নিয়ে এখনো কেউ পরিষ্কার বলতে পারেন না। প্রকৃত উৎপাদন কতটুকু হলো, কতটুকু মানুষ খেয়েছে? এই চাল নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন তথ্য দেয়। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আমরা দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাড়তি চালও হয়। তবে কেন প্রতি বছর ২০ লাখ টনের মতো চাল আমদানি হচ্ছে? বরং বছরে এ পরিমাণ চাল উদ্বৃত্ত থাকার কথা।