প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে পানি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও জ্বালানি— এই তিন বিষয়ের ওপর বেশি মনোযোগ ছিল বাংলাদেশের। সফরে ওই তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নতুন অনুরোধ এবং পুরনো বিষয় পুনর্ব্যক্ত করা হলেও যৌথ বিবৃতিতে ভারতের পক্ষ থেকে ওই বিষয়গুলো নিয়ে কোনও ধরনের জোরালো প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন দেখা যায়নি।
সাবেক একজন কূটনীতিক এ বিষয়ে বলেন, ‘একটি সফরের মূল বিষয়বস্তুর প্রতিফলন হচ্ছে যৌথ বিবৃতি এবং এর মাধ্যমে সবাইকে জানানো হয় কী কী সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
পানি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও জ্বালানি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, এটি যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু কোনও ধরনের প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার করা হয়নি।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা চারদিনের সফরে বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে শীর্ষ বৈঠক ৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়।
তিস্তার গুরুত্ব কি হারিয়ে যাচ্ছে?
২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময়ে তিস্তা নদীর পানিচুক্তির কথা ছিল, কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরীণ জটিলতার কারণে এটি করা যায়নি। ওই সময় থেকে অর্থাৎ ২০১১, ২০১৫, ২০১৭, ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালে যত শীর্ষ বৈঠক হয়েছে প্রতিটিতে তিস্তা চুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী, উভয়ের মন্তব্য যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এবারের যৌথ বিবৃতিতে শেখ হাসিনা বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছেন উল্লেখ আছে, কিন্তু এর বিপরীতে নরেন্দ্র মোদি কী বলেছেন সেটির কোনও উল্লেখ নেই।
এ বিষয়ে সাবেক আরেকজন কূটনীতিক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে যদি কোনও বাক্য যৌথ বিবৃতিতে ব্যবহার করা হয়, তবে অন্য প্রধানমন্ত্রী ওই অনুরোধের বিপরীতে কী জবাব দিয়েছেন সেটির উল্লেখ থাকতে হবে।’
২০২২-এর সফরের যৌথ বিবৃতিতে তিস্তা প্রসঙ্গে বলা হয়, ‘আগের আলোচনাকে মনে করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘকাল ধরে অমীমাংসিত থাকা তিস্তা নদীর অন্তর্বর্তীকালীন পানিবণ্টন চুক্তি সম্পন্ন করার অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করেন।’ কিন্তু যৌথ বিবৃতিতে এর উত্তরে নরেন্দ্র মোদি কী বলেছেন সেটির উল্লেখ নেই।
ওই সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘মনে হচ্ছে তিস্তা আস্তে আস্তে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলছে।’
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও জ্বালানি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও অন্যান্য বৈশ্বিক কারণে খাদ্য ও জ্বালানির ক্ষেত্রে সংকট দেখা দিয়েছে, যার প্রভাব অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পড়েছে। প্রতিবেশী ভারত থেকে বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করে থাকে। তবে অনেক সময়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির কারণে ওই দেশ থেকে রফতানি বন্ধ করে দিলে সমস্যায় পড়ে বাংলাদেশ।
আরেকজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘যৌথ বিবৃতিতে চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ভারত থেকে আমদানির বিষয়ে আলোচনার কথাটি উল্লেখ আছে। কিন্তু এক্ষেত্রে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখবে।‘
আবার জ্বালানির ক্ষেত্রে দুই কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও সহযোগিতার অঙ্গীকারের বিষয়টি বড় আকারে আসেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি।