বেসামরিক প্রশাসনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে ভয়াবহ আর্থিক কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস হয়েছে। এই কেলেঙ্কারিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এবং যুগ্ম সচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও আলী আযম সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। হোয়াটসঅ্যাপের সংবেদনশীল কথোপকথনে এই কেলেঙ্কারির তথ্য উঠে এসেছে, যা বর্তমানে প্রশাসনের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
বড় ধরনের আর্থিক লেনদেন
এই কেলেঙ্কারির মূল বিষয় হলো ডিসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আর্থিক সুবিধা নেওয়া। মোখলেস উর রহমান ও ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদের হোয়াটসঅ্যাপে কথোপকথনে উঠে এসেছে, ডিসি নিয়োগের বিনিময়ে বড় অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে। মোখলেস উর রহমান কথোপকথনে নিজেকে ‘নির্লোভ’ দাবি করলেও পাঁচ কোটি টাকার চাহিদা প্রকাশ করেন। অন্যদিকে, ড. জিয়া তাকে ১০ কোটি টাকা রাখার পরামর্শ দেন। কথোপকথনে আর্থিক লেনদেনের বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা উঠে আসে, যার মধ্যে টাকা অর্ধেক ডলারে এবং বাকিটা ক্যাশে নেওয়ার কথাও ছিল।
প্রমাণ ফাঁস
ফাঁস হওয়া স্ক্রিনশটগুলোতে দেখা যায়, মোখলেস এবং জিয়াউদ্দিনের মধ্যে ডিসি নিয়োগ নিয়ে বেশ কিছু পরিকল্পনা হয়। তারা নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে ডিসি হিসেবে নিয়োগ দিতে পরামর্শ দেন এবং সেই নিয়োগের জন্য আর্থিক সুবিধা নেওয়া হয়। এসব কথোপকথন সম্প্রতি সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মহলে ছড়িয়ে পড়েছে। দৈনিক কালবেলার এক প্রতিবেদনে এই সংক্রান্ত চেক ও ডিসি নিয়োগের নথি উদ্ধার হওয়ার কথা প্রকাশিত হয়, যা নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।
সিনিয়র সচিবের বক্তব্য
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান ফোন ধরেননি। তবে পরে একটি এসএমএসে তিনি লিখেছেন, “প্রশ্নই ওঠে না।” অন্যদিকে, যুগ্ম সচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ড. জিয়াউদ্দিন ও আলী আযমের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টদের ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।
সরকারের পদক্ষেপ
প্রকাশিত কেলেঙ্কারির পর প্রশাসন এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। ইতিমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সন্দেহভাজন যুগ্ম সচিবকে সরিয়ে সিলেটে বদলি করা হয়েছে। এছাড়াও, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে তদন্ত করার জন্য এক সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রশাসনের ভেতরে-বাইরে এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনও মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপের বিরোধিতা করে তা প্রত্যাহারের জন্য চিঠি দিয়েছে।
ডিসি নিয়োগ নিয়ে এমন ভয়াবহ আর্থিক কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশিত হওয়ায় প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধা নেয়ার কেলেঙ্কারি থেকে মুক্ত নয়।