সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই দলের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার ও জুলুম চলছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, কারাগারে নেতাকর্মীদের ওপর এখনও নির্যাতন চলছে। আওয়ামী লীগের ইশারায় বিএনপিকে নির্মুল করতে প্রশাসন মাঠে নেমেছে। এছাড়া, সারাদেশে নতুন করে নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক মামলায় জড়ানোর পাঁয়তারা চলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির এক দফা আন্দোলন চলতে থাকবে। এ সময় জনগন ভোট বর্জন করেছে এবং জনগনকে সাথে নিয়ে এই সরকারের পতন নিশ্চিত করা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।কী দেখে বলবেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন যে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তার কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্ট ছাড়া আর কাউকেও দেখা যায়নি। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার পরও বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল নির্বাচনের ভিডিও ফুটেজসহ নানা অনিয়ম তুলে ধরেছে।
১০ বছরের শিশুর ভোট দেওয়া, কেন্দ্র দখল করে গণহারে সিল মারার ঘটনা ঘটেছে। ভোটারবিহীন ভোটকেন্দ্র তো সারাদিন দৃশ্যমান হয়েছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘নির্বাচন অনিয়ম বা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি, তার প্রমাণ কই’। যারা অপরাধ করে তারা নিজেদেরকে নিরপরাধ ভাবে। ভোটারবিহীন ভোটকেন্দ্র তো সারাদিন দৃশ্যমান হয়েছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, নির্বাচনে জালিয়াতির সবচেয়ে বড় প্রমাণ আপনি নিজেই। কারণ, আপনার নিয়োগকৃত নির্বাচন কমিশনের সচিব নিজেই বলেছেন যে, যারা জিতবে ডিসিদের কাছে তাদের তালিকা আগেই দেওয়া আছে, ঘোষণা দিয়ে দিলেই বাসায় গিয়ে ঘুমাতে পারবে। আপনার ভোট জালিয়াতির তথ্য আপনার দলের নেতারাই সংবাদ সম্মেলন করে জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। গতকাল তারাও আপনার সামনে বসেছিলেন। আপনার বক্তব্য শুনে তারা হয়ত লজ্জা পেয়েছেন।
জালিয়াতির নির্বাচনের প্রমাণ ভূরি ভূরি আছে দাবি করে তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল নির্বাচনের ভিডিও ফুটেজসহ নানা অনিয়ম তুলে ধরেছে। গণমাধ্যমে শূন্য ভোটকেন্দ্রের ছবি এবং ভিডিওই কেবল দেখা যায়নি; নির্বাচনের পূর্বাপর নিজেরা নিজেরা খুনোখুনি, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ভাঙচুরের অসংখ্য ভিডিও ও স্থির চিত্র ভাইরাল হয়েছে এবং গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। বিভিন্ন আসন থেকে প্রার্থীরা জালিয়াতি হচ্ছে বলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। জনগণ এই ভোট সর্বান্তঃকরণে বর্জন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শুধু আপনিই ‘চোখ থাকিতে অন্ধ’।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, কারাগারে রাজবন্দিদের থেকে মুক্তিপণ আদায়ের মতো দস্যুদের ন্যায় পরিবেশে তৈরি করার উদ্দেশ্য ছিল ‘আমরা আর মামুদের’ একতরফা নির্বাচন। আর সেটি বাস্তবায়ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বিরোধী দলের মিছিল—সমাবেশে হামলা চালিয়ে, গুলি করে, মানুষ হত্যা করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ রাজনৈতিক নেতাদের কারাগারে নিক্ষেপ করে নিষ্ঠুরভাবে দমন—পীড়ন চালানো হয়েছে তা আপনার (শেখ হাসিনা) দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক প্রকাশ্যেই বলে দিয়েছেন। সেটাকে খণ্ডন করবেন কীভাবে? ভারত যে আপনাদেরকে (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় বসিয়েছে সেটি তো আপনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী, মিথ্যার তাস দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, ডা. আবদুল কুদ্দুস, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, জেড মোর্তুজা চৌধুরী তুলা, আমিনুল ইসলাম, তরিকুল আলম তেনজিং, মৎস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ, অধ্যাপক ইমতিয়াজ বকুল প্রমুখ।