লো স্কোরিং ম্যাচ যে হাইভোল্টেজের হয় তা চলতি বিশ্ব কাপেই আরেকবার দেখা গেলো। সেন্ট ভিসেন্টের কিংস্টোনে ভোর সাড়ে পাঁচটায় সুপার এইটে পা রাখতে বাংলাদেশ যখন মাঠে নেমেছে, তখন বাঙালি কেবল আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে ওঠে নিচ্ছিলো ঈদুল আজহার প্রস্তুতি।
একদিকে সুপার এইটে কোয়ালিফাই, অন্যদিকে এমন আনন্দের দিনে কী মনমরা হয়ে থাকতে হবে এমন শঙ্কা! তবে সেই শঙ্কার মুখে ছাই ঘঁষে সুপার এইটে কোয়ালিফাই করলো বাংলাদেশ, নেপালকে তারা হারালো ২১ রানে।
সোমবার সকালে টস জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নেন নেপালের অধিনায়ক রোহিত পাড়েল।
তার সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল তা খেলার প্রথম বল থেকে প্রমাণ করতে থাকেন টাইগার ব্যাটররা। ইনিংস শুরুর প্রথম বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম।
ওয়ান ডাউনে এসে বেশি সময় নেন নাই টাইগার কাপ্তান নাজমুল হোসেন শান্ত। একটু থিতু হতেই সাজঘরে আরেক ওপেনার লিটন।
সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হয়ে যায় পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার দুই বল আগে। সাত বল খেলে মাত্র ৯ রান করেই সাজ ঘরে ফেরেন বাংলাদেশ দলের ‘ত্রাতা’ তৌহিদ হৃদয়।
এরপর সাকিব, মাহমুদুল্লাহ, জাকের আলীরা এদিক ওদিক ব্যাট চালিয়ে কিছুটা রান করেছেন। বাংলাদেশের ইনিংসে কারো রান উল্লেখ করার মতো না হলেও এদিন সর্বোচ্চ স্কোর করেন সাকিব (১৭)। সুতরাং এখান থেকে আর বুঝতে বাকি নেই, ব্যাটিং কতোটা হতশ্রী ছিল নেপালের বিপক্ষে।
অবস্থা এমন হয় যে, কুড়ি ওভার পর্যন্ত বাংলাদেশ নেপালের বিপক্ষে টিকে থাকতে পারেনি। ১৯ দশমিক তিন ওভারে যখন বাংলাদেশ অলআউট হয়, তখন তাদের খাতায় রানের সংখ্যা মাত্র ১০৬।
নেপালের বেলারদের মধ্যে সোমপাল, দীপেন্দ্র, রোহিত, লামিছানে দুটি করে উইকেট নেন।
নেপালকে জিততে যখন ১০৭ রান করতে হবে, এ ভেবেই দুরু দুরু করছিল বাঙালির বুক। ধারনা করা যাচ্ছিলো, তারা ২০ ওভার টিকে থাকলেই এই জয় পেয়ে যাবে।
কিন্তু ওই যে, লো স্কোরিং ম্যাচ, তা তো উত্তেজনা ছড়াবেই। হলোও তাই।
নেপালের ইনিংসে তৃতীয় ওভারে দুটি উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরান পেসার তানজিম সাকিব। দুই দশমিক দুই ওভারে কুশল বাহুতেল এবং এর দুই বল পর অনিল সাহাকে সাজঘরে ফেরান তিনি। এক ওভার পর আক্রমণে ফিরে আবার নেপাল শিবিরে আঘাত তানজিমের। এবার তুলে নেন নেপালি কাপ্তান রোহিতের উইকেট।
এদিকে পাওয়ার প্লে শেষের আগের ওভারে আক্রমণে ফিরেই উইকেট পান মোস্তাফিজুর। পাওয়া প্লে শেষে নেপালের সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় চার উইকেট হারিয়ে ২৪ রান। এর পরের ওভারে এসেই বিশ্বকাপে প্রথম উইকেটের দেখা পান সাকিব।
পাওয়ার প্লে পর্যন্ত ডমিনেট করার পর ঘুরে দাঁড়ায় নেপাল। ঘুরতে থাকে খেলার মোড়। কুশল মাল্লা ও দীপেন্দ্র সিংয়ের ব্যাটে জয়ের দিকেই যাচ্ছিলো নেপাল। কিন্তু এখান থেকে ম্যাচের ইউটার্ন করিয়ে দেন মোস্তাফিজুর। রহমান।
১৬ দশমিক চার ওভারে কুশল মাল্লাকে (২৭) ফেরান তিনি। তবে চমৎকার ঘটে ১৯তম ওভারে। মোস্তাফিজুর ওই ওভারের পাঁচটি বল ব্যাটার দীপেন্দ্রকে টাচই করতে দেননি। শেষ বলে দীপেন্দ্র সফট হ্যান্ডে খেলতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন। মোস্তাফিজুরের ওই ওভার শেষ হয় মেডেন উইকেটের মধ্য দিয়ে। তখনই প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের জয়।
শেষ ওভারে যখন ২২ রান দরকার তখন আক্রমণ প্রান্তে সাকিবকে আনেন কাপ্তান শান্ত। ওই ওভারের পর পর দুই বলে নেপালি দুই টেল এন্ডারকে আউট করে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন তিনি। নেপালের মোট সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ৮৫ রান। বাংলাদেশের নিশ্চিত হয় টে-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইট।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে তানজিম সাকিব চারটি, মোস্তাফিজুর রহমান তিনটি, সাকিব আল হাসান দুটি এবং তাসকিন আহমেদ একটি উইকেট নেন।
ম্যাচ সেরা হন তানজিম সাকিব।