মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

নেপালের অস্থিরতার নেপথ্যে আমেরিকার ডিপ স্টেট? চিনকে ঠেকাতেই এই নোংরা খেলা?

গত তিন বছরে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির রাজনৈতিক মানচিত্রে টেকটোনিক পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সঙ্কট, পাকিস্তানে ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতি থেকে শুরু করে বাংলাদেশে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন — প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে পরিচিত চিত্রনাট্য: ব্যাপক গণবিক্ষোভের, সরকারের পতন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে জেন জ়ি-র মধ্যে ব্যাপক বিক্ষোভের পরে নেপালও এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।

শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, বাংলাদেশের মতো নেপালেও একই ছবি দেখা গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে শুরু হওয়া আন্দোলন দ্রুতই দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভের রূপ নেয়। ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক হিংসা। সোম ও মঙ্গলবারে মোট ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। সূত্রের খবর, পদত্যাগের পরেই সেনার কপ্টারে দেশও ছেড়েছেন তিনি।

নেপালে হঠাৎ যে ভাবে উসকে উঠল এই আন্দোলন, যে ভাবে রক্তাক্ত চেহারা নিল শান্তিপূর্ণ মিছিল, যে ভাবে দু’দিনের মধ্যে ঘটে গেল রাজনৈতিক পালাবদল, তাতে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করাই এর কারণ? নাকি নেপালের অস্থিরতার পিছনে রয়েছে বাইরের কোনও হাত? হিমালয়ের কোলের দেশটিও শেষ পর্যন্ত আমেরিকা বনাম চিনের ছায়াযুদ্ধের আরও এক ময়দানে পরিণত হলো?

ছবিগুলো বড্ড চেনা

সোমবার রাতেই সোশ্যাল মিডিয়াগুলির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল কেপি শর্মা ওলির সরকার। কিন্তু তাতে বিক্ষোভ থামেনি। মঙ্গলবার সকাল থেকেই কাঠমান্ডুর পাশাপাশি গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এই বিক্ষোভ। ‘ওলি চোর, দেশ ছোড়’ স্লোগানে ছেয়ে যায় কাঠমান্ডুর আকাশ-বাতাস।

রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাউডেল, প্রধানমন্ত্রী ওলি এবং অন্যান্য মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত বাসভবন ভাঙচুর করে ও আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। অর্থমন্ত্রী বিষ্ণু পৌডেলকে প্রকাশ্য রাস্তায় ধাওয়া করে মারধর করে জনতা।

পুড়িয়ে দেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্ট, কাঠমান্ডুর বিখ্যাত হিলটন হোটেল। এই হোটেল ক্ষমতাসীন জোটের এক নেতারই মালিকানাধীন।

আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঝালানাথ খানালের বাড়িতেও। আগুনে ঝলসে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর স্ত্রী রাজ্যলক্ষ্মী চিত্রকরের।

ছবিগুলো বড্ড চেনা। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে এবং ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কাতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। নেপালের মতো, এই দেশগুলিতেও যুব সমাজের নেতৃত্বে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা এবং শ্রীলঙ্কার গোটাবায়া রাজাপক্ষে যথাক্রমে ভারতে এবং মলদ্বীপে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

আর তার পরেই দেখা গিয়েছিল নেতাদের বাসভবনে ভাঙচুর, লুটতরাজ। দুই দেশেই বিক্ষোভকারীদের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির বাসভবন থেকে জিনিসপত্র লুট, আসবাবপত্র ভাঙচুর, শোওয়ার ঘরে বিশ্রাম এবং সুইমিং পুলে স্নান করতে দেখা গিয়েছিল।

নেপালে চিন-আমেরিকার খেলা?

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রথম মেয়াদ থেকেই কেপি শর্মা ওলি নেপালকে চিনের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ঐতিহ্যবাহী মিত্র শক্তি ভারত থেকে সরে চিনের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টা করেছেন।

সাধারণত নেপালি রাষ্ট্রনেতারা ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম বিদেশ সফরে ভারতে আসেন। গত জুলাই মাসে চতুর্থ মেয়াদে শপথ নেওয়ার পরে ওলি গিয়েছিলেন চিনে।

চিন সফরের সময়, ওলি চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা BRI চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। এতে ঋণের বোঝায় ডুবতে থাকা নেপালের জন্য ৪ কোটি ১০ লক্ষ মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত হয়েছিল।

তবে এই BRI প্রকল্প চিনের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের একটা হাতিয়ার বলা যেতে পারে। বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে ঋণ নিয়ে ডু্বেছিল শ্রীলঙ্কা। ২০২২ সালের মে মাসে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছিল কলম্বো। রাজাপক্ষে সরকারের পতনের পিছনে যে অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছিল, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা ছিল তার অন্যতম কারণ।

দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে চিন যে প্রভাব বাড়াচ্ছে, তা অজানা নয় আমেরিকার। বরাবরই এই নিয়ে সতর্ক ওয়াশিংটন। চলতি বছরের শুরুতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ‘মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ নেপাল কম্প্যাক্ট’ ফিরিয়ে এনেছিল। এটি আদতে একটি জ্বালানি ও সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের প্যাকেজ। এর মাধ্যমে আমেরিকার কাঠমান্ডুকে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়ার কথা।

ফলে এখন নেপালের বুকে সরাসরি প্রতিযোগিতা চলছে আমেরিকার ‘মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ নেপাল কম্প্যাক্ট’-এর সঙ্গে চিনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর। কাঠমান্ডু কোন শিবিরে থাকবে? অতি সম্প্রতি চিনের বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নিয়েছিলেন ওলি। স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আমেরিকার বিরোধী শিবিরেই আছে নেপাল।

সোম ও মঙ্গলবারের ঘটনাক্রম দেখে একাংশের বিশ্লেষক এবং বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নেপালের অস্থিরতার পিছনে হাত থাকতে পারে আমেরিকার ডিপ স্টেট।

আমেরিকা-বান্ধব ‘রাজতন্ত্র’-ই ভবিষ্যৎ?

গত কয়েক মাস ধরেই উত্তেজনার আঁচ বাড়ছিল নেপালে। ২০০৮ সালে গণতন্ত্র কায়েম হওয়ার পর থেকে, ১৭ বছরে ১৪টি সরকার দেখেছে নেপাল। বেশিরভাগই ছিল জোট সরকার। ক্ষমতা ঘোরাফেরা করেছে মূলত তিনজনের মধ্যে — চিনঘনিষ্ঠ ওলি, মাওবাদী সেন্টারের পুষ্প কমল দহল ‘প্রচণ্ড’ এবং পাঁচবারের প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা। তিন জনের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির বড় অভিযোগ রয়েছে।

এর ফলে ক্রমশ দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি হতাশ হয়ে পড়েছে নেপালি তরুণরা। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসায় মজবুত হয়নি অর্থনীতি। স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বেকারত্ব।

অ্যাপ নিষিদ্ধ করার কয়েক সপ্তাহ আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নেপালি যুব সমাজের এই হতাশা ধরা পড়েছিল। নেপালি রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রাকে তুলে ধরে রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল ‘নেপো কিড’ প্রচার।

রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে যে নেপালি তরুণরা ক্ষুব্ধ, তার একটা আঁচ পাওয়া গিয়েছিল চলতি বছরের শুরুতেও। মার্চেই নেপালে রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। দাবি উঠেছিল, নেপালকে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র হিসেবে গড়ে তোলার পরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছে।

এই অবস্থায় নেপালের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন বর্তমানে চিন-বান্ধব সরকারের পতনের পরে নেপালে খুব তাড়াতাড়ি একটি আমেরিকা-বান্ধব ‘রাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। ঠিক শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের কায়দাতেই।

সন্দেহের জন্ম দিচ্ছে নেপালে এই অস্থিরতার সময়ও। ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক এখন তলানিতে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরের শেষেই ভারত সফরে আসার কথা চলছিল ওলির। ঠিক সেই সময়েই এই রাজনৈতিক পালাবদল ঘটল।

কী ঘটেছিল বাংলাদেশে?

গত বছর বাংলাদেশে হাসিনাকেও একই ধরনের অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সম্মুখিন হতে হয়েছিল। আমেরিকার সঙ্গে হাসিনা বিরোধ কোনও গোপন বিষয় ছিল না। ২০২৪-এর জানুয়ারিতে বাংলাদেশ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল আমেরিকা।

ক্ষমতাচ্যুতির পরে, সরাসরি আমেরিকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছিলেন হাসিনা। তিনি দাবি করেছিলেন বঙ্গোপসাগরের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বিমান ঘাঁটি স্থাপন করতে চেয়েছিল আমেরিকা। সেই অনুমতি না দেওয়াতেই আমেরিকা এই ষড়যন্ত্র করেছে।

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!