নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে চার নম্বর কূপের খনন শেষে চারটি স্তরে গ্যাসের খোঁজ পেয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমরা আশা করি প্রতিদিন এখান থেকে ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। তবে তার চেয়েও বেশি পাওয়া যেতে পারে।
সোমবার রাতে রাষ্ট্রায়াত্ব এই প্রতিষ্ঠানটি কূপ পরীক্ষা শুরু করে। পরে গ্যাসের খোঁজ পাওয়া যায়। উৎপাদন টেস্ট শেষে জানা যাবে এখানে মজুদ গ্যাসের পরিমাণ।
বাপেক্স সূত্র জানায়, ওই কূপে তিন হাজার ১১৩ মিটার গভীর পর্যন্ত খনন করা হয়। যার এক হাজার ৯২১ থেকে এক হাজার ৯৭৩ মিটার পর্যন্ত প্রথম স্তর, দুই হাজার ৫৪৮ থেকে ৫৮৫ মিটার পর্যন্ত দ্বিতীয় স্তর এবং তিন হাজার ৮১ থেকে ১০১ মিটার পর্যন্ত চার স্তরে গ্যাসের অস্তিত্ব মিলেছে।
বাপেক্স জানায়, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার অম্বরনগর ইউনিয়নের ওয়াছেকপুর গ্রামে খনন করা বেগমগঞ্জ-৪ (পশ্চিম) কূপে মিলেছে গ্যাসের অস্তিত্ব। ২০২৪ সালের ২৯ এপ্রিল শুরু হওয়া খননকাজ শেষ হয়ে ডিএসটি টেস্ট শেষে এখন চলছে সর্বনিম্ন স্তরের উৎপাদন টেস্ট। প্রাথমিকভাবে কূপটির চার স্তরে গ্যাসের অস্তিত্ব মিলেছে।
বাপেক্স এর ভূ-পদার্থিক বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার হাওলাদার ওহিদুল ইসলাম জানান, আমাদের লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি গ্যাস মিলতে পারে বলে ধারণা করছি। এখন পর্যন্ত টার্গেট করা চারটি জোনের মধ্য থেকে তিনটি জোন থেকে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলন করা যাবে বলে আশা করছি।
বাপেক্সের ভূতাত্ত্বিক বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শামসিয়া মুক্তাদির জানান, প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধানে বাপেক্স দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে আসছে। বেগমগঞ্জ-৪ (পশ্চিম) কূপটি গত এপ্রিলের ২৯ তারিখে খনন কাজ শুরু হয়। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না থাকায় আমাদের খনন কাজেও কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। দিনশেষে আমরা সফল হতে পেরেছি। কূপে গ্যাসের মোট পরিমাণ জানতে আরও কিছু সময় লাগবে।
বেগমগঞ্জ-৪ (পশ্চিম) মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপের প্রজেক্ট ডিরেক্টর মো. প্রিন্স আল হেলাল বলেন, এখান থেকে প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ করার লক্ষমাত্রা ছিলো। তবে লোয়ার জোনে গ্যাসের কন্ডিশন দেখে মনে হচ্ছে আরো ভালো কিছু আশা করা যাবে। উৎপাদন টেস্ট শেষে মোট গ্যাসের মজুদ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
বেগমগঞ্জ-৪ (ওয়েস্ট) মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ খনন অধিকর্তা (ডিলিং ইনচার্জ) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কূপের প্রতিটি স্তরে কী পরিমাণ গ্যাস মজুত রয়েছে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষা করা হবে। গত ২৯ এপ্রিল জেলার সোনাইমুড়ী উপজলায় অম্বরনগর ইউনিয়নের ওয়াছেকপুর গ্রামে কূপটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই খনন কাজ শেষ করে আগুন দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কূপটির চারটি জোনের প্রতিটি জোনে প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করে বাখরাবাদের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করা যাবে বলে আশা করছে বাপেক্স।এটি খনন করতে আমাদের নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে। সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমরা আজ আলোর মুখ দেখেছি। একসময় গ্যাসকূপ খননের কাজে বিদেশি শ্রমিক ও কর্মকর্তারা যুক্ত থাকতো। কিন্তু এখন তার পরিবর্তন হয়েছে। এ কূপ খননের সঙ্গে জড়িত প্রায় দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই বাংলাদেশের। এটাও আমাদের জন্য অনেক আনন্দের।
প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আল হেলাল প্রিন্স জানান, ২০২২ সালের ২৫ এপ্রিল প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া যায়। ২০২৩ সালে সাড়ে পাঁচ একর ভূমি হুকুম দখল করা হয়। ২০২৩ সালে ডিসেম্বরে অবকাঠামো তৈরি এবং ২০২৪ সালের দুই এপ্রিল রিগ নিয়ে আসা হয় এবং ২২ এপ্রিল স্থাপন করা হয়। আমরা চারটি লেয়ারে গ্যাসের সম্ভাব্যতা পেয়েছি। ধারণা করছি প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা যাবে। সকল কাজ শেষে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জাতিকে একটা ভালো খবর দিতে পারবে বলে আশা করছে বাপেক্স।
বাপেক্স বলছে, এটির আগে নোয়াখালীর এ অঞ্চল তথা বেগমগঞ্জে ১৯৭৬ সালে প্রথম গ্যাস কূপের সন্ধান মেলে, ১৯৭৮ সালে দ্বিতীয় কূপের সন্ধান মিললে সেগুলো খনন করা হয়। তবে পরবর্তীতে ওই দুটি কূপে কোনো গ্যাস পাওয়া যায়নি। ২০১৩ সালে তৃতীয় কূপের সন্ধান মিললে খনন থেকে গ্যাস উৎপাদনে যায় এবং ২০১৮ সালে একই কূপে ওয়ার্কওভার (আক্রমণাত্মক কৌশল) চালিয়ে এখন প্রতিদিন আট মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। বেগমগঞ্জ-৪ (ওয়েস্ট) মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ থেকে প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। বাপেক্সের দুই শতাধিক প্রকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক এ কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত রয়েছে।
এদিকে এই গ্যাস শিল্প কারখানা এবং আবাসিক লাইনে ব্যবহারের দাবি জানিছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় মোরশেদ আলম বলেন, আমরা চাই গৃহস্থালির কাজে গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া হোক। নোয়াখালীর গ্যাসের মাধ্যমে নোয়াখালীর উন্নয়ন সম্ভব। গ্যাসের সম্ভাবনাকে কাজে লাগালে জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বেকার যুবকদেরও কর্মসংস্থান হবে। একটি উন্নত সমৃদ্ধ জেলায় পরিণত হবে নোয়াখালী।