সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রত্যাহার হচ্ছে কি? শতাধিক নেতার বহিষ্কারাদেশ

খুলনার মঞ্জুর আবেদন-রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চান

* তৈমুর আলম খন্দকার , সাক্কুসহ কয়েকজনের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি

বিএনপির শতাধিক নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তৃণমূলকে শক্তিশালী এবং চলমান আন্দোলনের স্বার্থে এসব নেতাকে দলে ফেরাচ্ছে দলটি। যাদের বেশির ভাগই দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়ে বহিষ্কার হয়েছিলেন।

সোমবার দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় দপ্তরের মাধ্যমে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে আবেদন করার পর অতীত অপরাধের ধরন এবং বর্তমান কর্মকাণ্ড বিচার-বিশ্লেষণ করে তাদের দলে ফিরিয়ে আনার পক্ষে মত দেন স্থায়ী কমিটির নেতারা।

তবে শীর্ষ নেতৃত্ব সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করে যারা বহিষ্কার হয়েছেন, তাদের ব্যাপারে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হাইকমান্ডকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা যুগান্তরকে এসব তথ্য জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য  বলেন, আগামী দিনের আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তাদের দলে ফিরিয়ে আনতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এমনও হতে পারে-দপ্তর থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বহিষ্কার হওয়া নেতাদের কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হবে।

স্থানীয় পর্যায়ে এমন শতাধিক নেতা রয়েছেন, যারা ত্যাগী ও পরীক্ষিত। তারা কেন্দ্রীয় দপ্তরে আবেদন করলে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। তবে সাবেক সংসদ-সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান, অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, সিলেটের শফি আহমেদ চৌধুরীসহ কয়েকজনকে দলে ফেরানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

কারণ, তাদের মধ্যে একজন দলীয় হাইকমান্ড সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। দুজন দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিটি নির্বাচনে এবং আরেকজন সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, যা দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার শামিল।

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী  বলেন, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা কেন্দ্রীয় দপ্তরে আসেনি। তবে নিয়ম অনুযায়ী বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের সুপারিশ নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে হবে। সেই আবেদন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে উত্থাপন করা হয়। তিনি বিবেচনা করলে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি দলগতভাবে বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিলেও তা অমান্য করে অংশ নেওয়ায় ২০৫ জন নেতাকে তখন বহিষ্কার করা হয়। এরপরও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়ে আরও দেড় শতাধিক নেতা বহিষ্কার হন। এছাড়া নানা কারণে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে আরও বহিষ্কার হন ৩০ নেতা। এর মধ্যে গত চার বছরে শতাধিক নেতা দলের দপ্তরে আবেদন করার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারও করা হয়।

সম্প্রতি ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে মহাসচিবের বাসায় হামলার ঘটনায় বহিষ্কৃত ১৮ জনের মধ্যে তিন নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়। এছাড়া নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম কিরণ, সুনামগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাবেক সভাপতি মদিনা আক্তার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাধীন ভোলাহাট উপজেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাবেক সহসভাপতি শাহনাজ খাতুন, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ আবু নাছের, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. আশরাফুল হক, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. মঞ্জিল হোসেন ভিপি, নাটোর জেলা সদর উপজেলাধীন পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শেখ এমদাদুল হক আল-মামুনসহ বেশ কয়েকজন নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

এখনো অর্ধশতাধিক নেতার আবেদন দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরে রয়েছে। তাদের মধ্যে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান কাজী শহিদুল ইসলাম, জামালপুরের জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ, দাউদকান্দির কেএমআই খলিল, নাটোর সদরের সাইফুল ইসলাম ডিউক, বাগাতিপাড়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সাবেক ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মো. শরিফুল ইসলাম লেলিন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মো. মহিউদ্দিন ও আব্বাসও রয়েছেন। তাদের মধ্যে লেলিন দল থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন। গত মার্চে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারপূর্বক স্বপদে বহালের জন্য আবেদন করেছেন।

খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুও কয়েক মাস আগে কেন্দ্রীয় দপ্তরে আবেদন করেছেন। সেখানে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চান বলে উল্লেখ করেছেন।

এছাড়া একযোগে বহিষ্কার হয়েছিলেন ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, ইখতিয়ার কবির, জয়দেব জয়, মামুন বিল্লাহ, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, বায়েজিদ আরেফিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক দবির উদ্দিন তুষার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজম সৈকত, আব্দুল মালেক এবং সদস্য আজীম পাটোয়ারি, ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জহিরউদ্দিন তুহিন। তারা সবাই ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা ছিলেন।

তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানেরও। এমনকি প্রত্যাহারের বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা একমত হন। কিন্তু আজানা কারণে এখন পর্যন্ত এই ১২ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি।

সূত্রমতে, আন্দোলন-সংগ্রামে সবার ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা চায় বিএনপি হাইকমান্ড। যে কারণে বিগত দিনে যাদের বিভিন্ন অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের আবারও স্বপদে রাখতে চায় দলটি। গত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বহিষ্কার হওয়া নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য কয়েকজন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন নেতারা। যাতে তারা কেন্দ্রীয় দপ্তরে প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেন।

একই সঙ্গে আগামী দিনে বিভাগীয় পর্যায়ের সমাবেশে তাদের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করতে চায় হাইকমান্ড। তবে বহিষ্কার হওয়ার পরও হাইকমান্ডের আনুগত্য থেকে যারা দলীয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের দলে ফেরানোর বিষয়ে কোনো ধরনের আপত্তি থাকবে না।

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা অভিযোগ করেন, স্থানীয় পর্যায়ে অনেক প্রভাবশালী নেতারাও আছেন যারা নানা কারণে বহিষ্কৃত হয়েছেন। তারা বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে আবেদন করলেও কোনো সুরাহা পাননি।

কারণ, সংশ্লিষ্ট এলাকায় যারা সংসদ নির্বাচন করতে চান, তারা দায়িত্বপ্রাপ্তদের ভুল বুঝিয়ে তাদের আবেদনের বিষয়ে সমাধান করতে দেন না। কিন্তু কারও স্বার্থ না দেখে এখন দল ও আন্দোলনের জন্য বিগত দিনে যারা রাজপথে ছিলেন, তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা উচিত বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!