সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রবাসীদের টাকা নিয়ে ‘নয়-ছয়’

সৌদিআরবে মৃত চাঁদপুরের আব্দুল আজিজের আর্থিক অনুদানের নথি গত ১৮ জুন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর দফতর থেকে সুপারিশ করে পাঠানো হলেও সেই মৃত প্রবাসীকর্মীর ফাইল নিষ্পত্তি হতে সময় লেগেছে ২০ দিন। অথচ মন্ত্রীর দফতর থেকে সুপারিশ করা হয়েছিল যেন ফাইলটি দ্রুত নিষ্পত্তি হয়। তা না হয়ে এই ফাইল ২০ দিন পড়েছিল ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ডিজির কার্যালয়ে। শুধু মৃত আব্দুল আজিজই নন কোনও প্রবাসী কর্মীর নথি ডিজি কার্যালয় থেকে ২০-৩০ দিনের আগে নিষ্পত্তি হয়ে আসে না। অথচ কয়েকবছর আগেও তা একদিন কিংবা দুইদিনে নিষ্পত্তি হয়ে যেত।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী মো. মামুন সিকদার এসব দেখ-ভাল করেন। আর তার হাতেই জিম্মি হয়ে আছে পুরো ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। তার অনুমোদন ছাড়া কিছুই ডিজি কার্যালয় থেকে কোথাও যায় না। এমনকি কোন ব্যাংকে প্রবাসীদের টাকা দিয়ে এফডিআর করা হবে তাও তিনি নির্ধারণ করেন। আর প্রবাসীদের এই অর্থ দিয়েই তিনি জড়িয়ে গেছেন এফডিআর বাণিজ্যে। তার এসব কাজ সম্পর্কে খোদ মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান অবগত থাকলেও তিনি কিছুই বলেন না। তাই সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধানকর্তার নীরব ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, প্রবাসীদের কল্যাণে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অর্থ এফডিআর করে রাখা আছে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে। এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ১২০০ কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্যাংকে এই অর্থ জমা রাখার বিনিময়ে কমিশন নেন মামুন সিকদার। তার এই কাজে সহযোগী হিসেবে আছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। চট্টগ্রামের মাহাবুব, কাওসার, মোকাররমসহ আরও কয়েকজন ডিজি হামিদুর রহমানের কার্যালয়ে নিজস্ব এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। বিভিন্ন কাজের কমিশনের কালেকশন তারা করেন আর তা সমন্বয় করেন মামুন সিকদার।

অর্থ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী কল্যাণ বোর্ডের অর্থের ৫০ শতাংশ সরকারি ব্যাংকে রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এফডিআর বাণিজ্যের কারণে তাও মানা হচ্ছে না। নিজেদের মুনাফার জন্য বেশিরভাগ অর্থই বেসরকারি ব্যাংকে জমা রাখা হয়। কোন ব্যাংকে কত শতাংশ কমিশনের ভিত্তিতে টাকা রাখা হবে তার দেনদরবার করে ডিজি কার্যালয়ের এজেন্টরা।

বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এফডিআর করা হচ্ছে যে টাকায় সেটি পুরোটাই প্রবাসীদের টাকা। এই টাকা কখন কোন ব্যাংকে এফডিআর হবে, কখন কোনটা টাকা ম্যাচিউর হবে সেই আলোচনা কোনও সময়েই বোর্ডের সভায় উপস্থাপন করা হয় না। প্রতি মাসে তিন লাখ টাকার আর্থিক অনুদানের ফাইল রেডি হয় ৭০০-৮০০টি। সেই ফাইল ডিজির কার্যালয়ে পড়ে থাকে ১৫-২০ দিন। তাতে অনেকগুলো টাকা আটকে থাকে। ৩৫০টি ফাইল যদি তিন লাখ টাকা আর্থিক অনুদানের হয় তাতে সাড়ে ১০ কোটি টাকা আটকে থাকে ব্যাংকে। এই টাকা যদি একটি ব্যাংকে মাসখানেক আটকে রাখতে পারে, তাতে ম্যাচিউরর্ড হয়ে অতিরিক্ত যে টাকা আসে তা দিয়ে অন্য ব্যাংকে এফডিআর করা যায়। ফাইল আটকানোর উদ্দেশ্যই হচ্ছে অন্য ব্যাংকে এফডিআর বাণিজ্য করা। এর আগে, যিনি ডিজি ছিলেন তার সময়ে একটি ফাইল ক্লিয়ার হয়ে আসতো দিনে দিনেই। আগের দিন না পারলে তিনি পরের দিন তা সই করে পাঠিয়ে দিতেন সংশ্লিষ্ট বিভাগে।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ডিজির কার্যালয় থেকে ফাইল অনুমোদনের পর তার ব্যক্তিগত সহকারী মামুন সিকদার ব্যাংকের কাছে অনুমোদিত ভাউচারের একটি সফট কপি পাঠায়। সফট কপি না পাঠানো পর্যন্ত মৃত কর্মীর ওয়ারিশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা যায় না। মামুন সিকদারের এই অপকর্মের কথা কল্যাণ বোর্ডের প্রায় সব কর্মকর্তা-কর্মচারী জানেন। এমনকি মন্ত্রীর দফতর ও সচিবের দফতরও ফাইল দেরিতে নিষ্পত্তি হওয়া নিয়েও উদ্বিগ্ন।

সম্প্রতি ফাইল নিষ্পত্তি হতে দেরি হওয়ার বিষয়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সভাপতি ও মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে বসেন। ফাইল নিষ্পত্তিতে দেরি হওয়ার বিষয়টি তিনি জানতে চাইলে ওই সভায় কেউ কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।

বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আরও জানান, ডিজি যেখানে নিজেই কিছু বলেন না তাহলে ধরে নিতে হবে তিনিও এর সঙ্গে জড়িত। আর তিনি যদি জড়িত হন তাহলে কোন কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী তার বিরুদ্ধে বলতে যাবেন?

তাদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, নথি নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হওয়ায় প্রবাসে মৃত কর্মীর পরিবার আর্থিকভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অনেক ইতিবাচক কর্মকাণ্ড আছে প্রবাসীদের জন্য। আর এসব কারণে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তাছাড়া এসব বিষয়ে একাধিকবার ডিজি হামিদুর রহমানকে অবহিত করলেও কোন সুরাহা পাওয়া যায়নি।

এফডিআর বাণিজ্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মহাপরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারী মো. মামুন সিকদার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এসব সিদ্ধান্ত মহাপরিচালক দেন এবং আমাদের ৩ জন পরিচালক আছেন বিষয়টি তারা দেখেন। আমি তো এখানে কিছুই না।

নথি বিলম্ব হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ওয়ারিশরা অনেক সময় সঠিক তথ্য দেন না। তাতে অনেক লোক বঞ্চিত হয়। আগে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছিল। যার কারণে কয়েক বছর আগে নিয়ম তৈরি করা হয়েছে। ফলে জেলা কর্মসংস্থান অফিস এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে একটা প্রতিবেদন পাঠায়। জেলা অফিস ফিজিক্যালি তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানোর পর প্রক্রিয়া শুরু হয়।

তবে জেলা কর্মসংস্থান অফিসের একজন কর্মকর্তা জানান, আমাদের এখানে বিলম্ব হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। তদন্তকারী কর্মকর্তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সংশ্লিষ্ট ফাইল পাঠিয়ে দেন।

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!