আলজেরিয়ান বংশোদ্ভূত মুসলিম কিশোর নাহেলকে হত্যার ঘটনায় পঞ্চম দিনের মতো গতকাল রোববারও উত্তাল ছিল ফ্রান্স। রাজধানী প্যারিসের অদূরে হে-লেস-রোজেস মেয়রের বাড়িতে হামলা ও গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে, এতে হামলায় মেয়রের স্ত্রীর পা ভেঙে গেছে। আগুন-সহিংসতা থামাতে সব ধরনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে দেশটির পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরও ৭১৯ জনকে। এই নিয়ে গ্রেপ্তার ছাড়াল ২ হাজার। তবে আগের চেয়ে বিক্ষোভের মাত্রা কিছুটা কমেছে।
বর্ণবাদ আর বৈষম্য দূর করার দাবির পাশাপাশি ট্রাফিক পোস্টে পুলিশের বন্দুক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া আইন বাতিলের দাবিও প্রবলভাবে উঠেছে। মানবাধিকর সংগঠনগুলো বলছে, সরকারের এই অনুমোদনের ফলে ট্রাফিক পোস্টে এই ধরনের গুলির ঘটনা বেড়েছে অন্তত ৫ গুণ। এদিকে, সংকটময় পরিস্থিতি নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
নাহেল ছাড়াও চলতি বছর ট্রাফিক স্টপে এইভাবে গুলি করে আরও দু’জন চালককে হত্যা করেছে দেশটির পুলিশ। গত বছর এই হত্যাকাণ্ড রেকর্ড ১৩টি ঘটেছিল। নিহতদের বেশির ভাগই কৃষ্ণাঙ্গ বা আরব বংশোদ্ভূত। এসব গুলির ঘটনায় প্রাণহানি আর দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ায় এখন প্রশ্ন উঠেছে, ট্রাফিক স্টপে গুলি চালানোর আইনি ভিত্তি কী?
২০১৭ সালে আইনে পরিবর্তন আনে ফ্রান্স সরকার। তখন থেকেই ফরাসি পুলিশকে ৫টি বিশেষ ক্ষেত্রে গুলি করার অনুমতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে– যখন গাড়ির চালক বা যাত্রীরা থামার আদেশ অমান্য করে এবং পুলিশ কর্মকর্তার জীবন বা শারীরিক নিরাপত্তা বা অন্য মানুষের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে। এসব অবস্থার সৃষ্টি হলে পুলিশ গুলি করতে পারে।
পুলিশের নিরাপত্তার জন্যই গুলির বৈধতা দিয়ে আইনে পরিবর্তন এনেছিল ফ্রান্স সরকার। রাজধানীর আশপাশের দরিদ্র এলাকাগুলোতে বেকারত্ব আর অপরাধের উচ্চমাত্রা বিরাজ করছে। ফলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাঁরা হামলার শিকার হচ্ছেন।
তবে গুলির বৈধতা দেওয়ার পর বেড়েছে হত্যাকাণ্ড। ২০২২ সালে পুলিশের হাতে নিহত হন ৩৯ জন। তাঁদের মধ্যে ১৩ জন চালক ছিলেন, যাঁদের আদেশ অমান্য করায় গুলি করে পুলিশ।
ফরাসি এনজিও হিউম্যান রাইটস লিগের সভাপতি হেনরি লেক্লর্ক বলেন, আইনটি পুলিশ কর্মকর্তাদের গুলি করতে উদ্বুদ্ধ করে। কারণ এই আইন তাঁদের গুলি করার ‘আইনি সুরক্ষা’ দেয়। কিছু রাজনীতিবিদও আইনটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
সমীক্ষা বলছে, ২০১৭ সালে পুলিশের হাতে ২৭ জন, ২০২০ সালে ৪০, ২০২১ সালে হত্যার সংখ্যা আরও বেড়ে ৫২-তে পৌঁছায়।
এদিকে, মেয়য়ের বাড়ি ও পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্ন। রোববার তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। হামলার প্রতিবাদে আজ টাউন হলে সারাদেশের মেয়ররা সমাবেশের ডাক দিয়েছেন।
দাঙ্গার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়ানো হচ্ছে গুজব। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ বলে ছাড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়া একটি চলচ্চিত্রে চিত্রায়িত একদল যুবক পুলিশের গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে, এমন ছবিকে এখনকার বলে চালিয়ে দিচ্ছেন অনেকে। এসব ভুয়া বলছে দেশটির পুলিশ।
দাঙ্গা সামাল দিতে উত্তর ফ্রান্সের ডার্নেটালে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এখানে ১৬ বছরের কম বয়সীদের চলাচল নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। এটি ২ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।