বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরির ঘটনা এবার উঠে আসছে পর্দায়। হ্যাকারদের একটি দল কীভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার চুরি করেছিলো এবং হ্যাকারদের কোন কারণে আরও বেশি অর্থ খোয়ানো থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক রক্ষা পায় সেই গল্প নিয়ে আসছেন পরিচালক ড্যানিয়েল গর্ডন।
ইউনিভার্সাল পিকচার্স হোম এন্টারটেইনমেন্টের ‘বিলিয়ন ডলার হাইস্ট’ তথ্যচিত্রটি মনে করিয়ে দেবে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা কতোটা বাস্তব ছিলো।
প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম দ্য ভার্জের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ওই ঘটনার পর বিশ্বের সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞরা কী পরিমাণ সতর্ক হয়ে উঠেছিলেন, তথ্যচিত্রটি তারও একটা উদাহরণ।
এ তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে, সারা বিশ্বের মেসেজিং নেটওয়ার্ক ব্যাংকগুলোকে একে অপরের সঙ্গে ট্রান্সফার করে কীভাবে হ্যাকাররা সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিনান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন ব্যাংকিং সিস্টেম ব্যবহার করতে সক্ষম হয়।
পরে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলে।
২০১৬ সালে রিজার্ভ চুরির ওই ঘটনা এক মাস পর বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারে। বিশ্বজুড়ে ঘটনাটি আলোড়ন তুলেছিলো।
ওই ঘটনার জেরে তখনকার গভর্নর আতিউর রহমানকে পদত্যাগ করতে হয়। দুই ডেপুটি গভর্নরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
বিভিন্ন সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ এবং লেখক মিশা গ্লেনির সাথে একাধিক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ‘বিলিয়ন ডলার হাইস্ট’ বাংলাদেশ ব্যাংকের ডাকাতিকে একটি ডেটা পয়েন্ট হিসাবে তুলে ধরেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাইবার ক্রাইম কতোটা প্রচলিত হয়ে উঠেছে তাও উঠে এসেছে এ তথ্যচিত্রে।
ট্রেলারে গ্লেনি দাবি করেছেন যে, সমন্বিত সাইবার হামলাগুলো মানবতার মহামারি, গণবিধ্বংসী অস্ত্র এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো জন্য একই ধরণের হুমকি তৈরি করে।
‘বিলিয়ন ডলার হাইস্ট’ তথ্যচিত্রটি আগামী ১৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাবে। মঙ্গলবার তথ্যচিত্রের ট্রেলার প্রকাশ পেয়েছে।
তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে, এ ঘটনা কীভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডাকাতি এবং পরবর্তীতে এ ধরনের আরও সাইবার হামলার জন্য হ্যাকারদেরও উৎসাহী করে তোলে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের হিসাবে জমা আছে। এ হিসাবে থাকা অর্থ থেকেই ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি করা হয় হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফটের সার্ভারে ম্যালওয়্যার পাঠিয়ে হ্যাক করে হ্যাকার দলটি।
ওই অর্থ ফিলিপাইনের স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোতে। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে ফিলিপিন্স সরকার বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দিলেও বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার আর পাওয়া যায়নি।
রিজার্ভ থেকে চুরি ডলার উদ্ধারে ২০২০ সালে মামলা করে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।