দেশের প্রায় এক লাখ আট হাজার পুলিশ সদস্যের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়েছে। ফাঁস হয়ে গেছে তাদের মুঠোফোন নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্রসহ কমপক্ষে ২০টি ব্যক্তিগত তথ্য। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি সংস্থার এডমিন প্যানেলে প্রবেশের ৪ হাজার ৭১৭টি আইডি ও পাসওয়ার্ড বেহাত হয়েছে। গেলো জুলাইয়ে ফাঁস হওয়া এসব তথ্য টেলিগ্রাম অ্যাপ ও ডার্ক ওয়েবে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
পুলিশের তথ্যভান্ডারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ক্রাইম ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা সিডিএমএস। এতে একটি মামলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অন্তত ৫০ ধরনের তথ্য থাকতে পারে।
অথচ গত ছয় থেকে আট মাসে পুলিশ সদস্যদের সিডিএমএসের লগ-ইন করার ইউআরএল, ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড ফাঁস হয়েছে দুই হাজারের বেশি। সিডিএমএস এবং পুলিশের কাছে থাকা অপরাধের তথ্যসহ প্রায় ৩১ হাজার ৪১৫টি তথ্য ফাঁস হয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবীদের একটি দল জানিয়েছে, ফাঁস হওয়া এসব তথ্য ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, ডার্ক ওয়েব এবং টেলিগ্রামের বিভিন্ন চ্যানেলে। বিগত এক বছরের মধ্যে এসব ফাঁস হয়। ফাঁস হওয়া তথ্য ইন্টারনেটের অপরাধজগৎ ডার্ক ওয়েব ও টেলিগ্রামের বিভিন্ন চ্যানেলে বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে।
রোববার এসব ফাঁস হওয়া তথ্যের খবর প্রকাশ করে দেশের একটি জাতীয় দৈনিক। জানানো হয়, বিগত ছয় মাসে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুই লাখের বেশি তথ্য ফাঁস হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের সেবা সংস্থা, পরিবহন সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা, কয়েকটি নিয়ন্ত্রক সংস্থারও তথ্য বেহাত হয়েছে ।
এই পরিস্থিতিতে দ্রুত তদন্তের তাগিদ দিলেন সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা। একই সাথে যে কোনো সংবেদনশীল তথ্য ব্যবহারে সুর্নিষ্ট নীতিমালা ও ফ্রেমওয়ার্ক তৈরির পরামর্শ তাদের।
তিনি আরও জানান, ফাঁসের ফলে নানা ধরনের অপরাধের ঝুঁকি তৈরি হয়। বিশ্বজুড়ে পরিচয় চুরির মাধ্যমে আর্থিক অপরাধ করা হয়। বাংলাদেশেও এ ধরনের অপরাধ বাড়ছে। এমনকি ব্যক্তির অজান্তে তাঁর নামে ব্যাংক ঋণ নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
ইন্টারনেট ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলো দেবার জন্য দেশের অভ্যন্তরীন নেটওয়ার্কই যথেষ্ট্য নিরাপদ। এই অভ্যন্তরীন নেটওয়ার্ককে বলে ইন্ট্রা-নেট। প্রযুক্তি বিশ্লেষক মোবারক হোসেন বলছেন, দেশজুড়ে ইন্ট্রা-নেট সেবার ব্যবহার বাড়ানো গেলে তথ্যফাঁস ঠেকানো অনেকটাই সম্ভব হবে। এছাড়া তথ্য সুরক্ষায় ব্যক্তি সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদও দিলেন এই প্রযুক্তি বিশ্লেষক।
উল্লেখ্য, দেশের সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও দপ্তরের কাছে নাগরিকদের অন্তত ৪০ ধরনের তথ্য আছে। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মিলিয়ে এ তথ্যের সংখ্যা অর্ধশত। এনআইডি তথ্যভান্ডারে ১২ কোটির বেশি নাগরিকের ৩২ ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য রয়েছে।