আশিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো।
বুধবার ওই বৈঠকে ঢাকা ও জাকার্তা জ্বালানি ও স্বাস্থ্য খাতে একসাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা বাসস।
বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া জ্বালানি ও স্বাস্থ্য খাতে তিনটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে, এতে দু’দেশের কল্যাণে কাজ করতে ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) এবং ১৮তম ‘ইস্ট এশিয়া সামিটে’ অংশ নিতে ইন্দোনেশিয়া সফরে রয়েছেন। জাকার্তা কনভেনশন সেন্টারে (জেসিসি) এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ- ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো ইউদোদো দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। ইমেজ: বঙ্গভবন প্রেসউইং
মোমেন বলেন, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাকে আমন্ত্রণ জানানো ও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে চমৎকার আতিথেয়তা প্রদানের জন্য ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের উন্নয়ন, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পিত ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ ধারণা- যা বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে প্রশংসা অর্জন করেছে, তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।
এ সময় তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক খাতে ব্যাপক উন্নয়নের কথাও উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ, সিরামিক ও তৈরি পোশাক (আরএমজি) পণ্য আমদানি করতে পারে।
রাষ্ট্রপতি গত এক দশক ধরে বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের ধারাবাহিকতার কথা তুলে ধরে ইন্দোনেশীয় বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানান।
রাষ্ট্রপতির উদ্ধৃতি দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘দুই দেশের চিকিৎসকদের সনদের স্বীকৃতি দেয়ার জন্য একটি পারস্পরিক সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ একশটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড), ৩৯টি হাই-টেক পার্ক ও অন্যান্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে।
তিনি বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়া যদি আগ্রহী হয়, তবে বাংলাদেশ খুশি হয়ে তাদের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থান নির্ধারণ করবে।’
সাহাবুদ্দিন আরও বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত একটি উৎপাদন কেন্দ্রে রূপান্তরিত হতে চায়। এই দশকের শেষ নাগাদ একটি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হওয়া বাংলাদেশের লক্ষ্য।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বিনিয়োগের সুযোগ পেতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতার ওপর জোর দেন।
সাহাবুদ্দিন ইন্দোনেশিয়ার বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থে বাংলাদেশে যে বিশাল সুযোগ রয়েছে- তা কাজে লাগাতে উৎসাহিত করেন।
শিগগিরই ঢাকা ও জাকার্তা বা বালির মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ স্থাপন করা হবে এবং দুই দেশের সমুদ্র বন্দরের মধ্যে শিপিং চালুর সুযোগ তৈরি হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ইন্দোনেশিয়ার সরকার ও জনগণের কাছ থেকে সর্বাত্মক সহায়তা কামনা করে বলেন, ‘বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় মিয়ানমারের বাস্তুচ্যূত নাগরিকদের আশ্রয় দিয়েছিল।’
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, আসিয়ান সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেখানে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আসিয়ান চেয়ার ও আসিয়ান সেক্টোরাল ডায়ালগ পার্টনারের সদস্যপদ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট অন্যদের কাছ থেকে আরও সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইন্দোনেশিয়ার সাথে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরত্ব দেয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময়ে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়াই বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয়।