তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘দেশে অপরাজনীতির ধারক-বাহক বিএনপি-জামায়াত, জঙ্গিগোষ্ঠী; তারা যদি রাজনীতিতে দাপিয়ে বেড়ায়, তাহলে এই অপরাজনীতি কখনও বন্ধ হবে না। যারা এগুলোকে লালন-পালন করে, পৃষ্ঠপোষকতা দেয়; তাদের রাজনীতিই বন্ধ হওয়া দরকার, তাহলে অপরাজনীতি বন্ধ হবে।’
রবিবার (২১ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি একথা বলেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘খুব সহসা বিএনপির অত্যাচারে, যারা হত্যার শিকার হয়েছে, যারা তাদের অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হয়েছে, তাদের পরিবারের সদস্যরা রাজপথে নামবে। বিএনপি এবং তাদের দোসররা দেশকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য বানিয়েছিল, আজ আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।‘
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি যারা অপরাজনীতি করে, প্রতিহিংসার রাজনীতি করে এবং বিরোধীপক্ষকে, প্রতিপক্ষকে হত্যা করার রাজনীতি করে, তাদের রাজনীতি বন্ধ না হলে এই অপরাজনীতি বন্ধ হবে না।’ অবশ্য হত্যার রাজনীতির মধ্যে যাদের জন্ম, তারাতো হত্যার রাজনীতিই করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি এখন বিদেশিদের কাছে গিয়ে মানবাধিকার নিয়ে অভিযোগ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ আইনে রূপান্তর করে যে মানবাধিকার এই দেশে লঙ্ঘিত হয়েছে; জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমান যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছিলেন; যেভাবে সেনাবাহিনীর অফিসার এবং জোয়ানদের অবিচারে মধ্যরাতে ডেকে নিয়ে গিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছিল; যেভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল; ২০১৩-১৪-১৫ সালে মানুষের ওপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে যেভাবে মানুষকে হত্যা করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছিল, ২০০১ সালে নির্বাচনের পর নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে গ্রামের পর গ্রাম নির্যাতন চালিয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যেভাবে সংখ্যালঘুদের বাস্তচ্যুত করা হয়েছিল; তখন যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছিল… সেগুলোর জবাব চাই বিএনপির কাছে।
তিনি বলেন, ‘আজকে তারা মানবাধিকারের কথা বলে, গুম-খুনের কথা বলে। অনেকে গুম হয়েছে বলে তারা প্রচার করেছে, পরে দেখা গেছে যে তারা ফিরে এসেছে। সালাহউদ্দীন সাহেব তাদের নেতা, তিনিও গুম হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছিল। পরে তাকে মেঘালয়ে খুঁজে পাওয়া গেছে। এরকম আরও অনেককেই খুঁজে পাওয়া গেছে।’
২০০৪ সালে ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা স্মরণ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে হাওয়া ভবন ও তারেক রহমানে প্রত্যেক্ষ পরিচালনায় বেগম খালেদা জিয়ার জ্ঞাতসারে তৎকালীন সরকারের সম্পূর্ণ পরিপূর্ণতায়, পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রেনেড হামলা পরিচালনা করা হয়েছিল। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিকে হত্যা করতে চেয়েছিল, সেদিন তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। কিন্তু সেদিন আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মীরা নিহত হয়েছিলেন এবং আওয়ামী লীগের ৫ শতাধিক নেতাকর্মীরা আহত হয়েছি, তাদের মধ্যে অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করেছে। যারা আহত হয়েছেন তারা সবাই গ্রেনেডের স্পিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছে।’
সেদিনের ভয়াবহ সেই ঘটনার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই মামলার আমি একজন সাক্ষী। আমি সাক্ষ্য দিয়েছি। এই মামলায় আমি দু’টি বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছি। একটি হচ্ছে আমি নিজে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং সাক্ষী। আরেকটি হচ্ছে, আমি তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী হিসেবে কাজ করতাম। আপনারা জানেন, সেদিন তার গাড়িতে গুলি লেগেছিল। গ্রেনেড হামলার পরও প্রধানমন্ত্রী প্রাণে বেঁচে গেছেন। তিনি যখন গাড়িতে উঠছিলেন তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আবার তা গুলি করা হয়েছিল। সেই গুলিতে তার দেহরক্ষী মাহবুব মৃত্যুবরণ করেন।’
মাহবুব সেনাবাহিনীর প্রাক্তন জোয়ান উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পার্সোনাল সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করতেন। অনেকগুলো গুলি গাড়িতে লেগেছে। সেই গাড়িটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে আমার স্বাক্ষরে হস্তান্তর করা হয়েছিল। আমার বুক পকেটে মোবাইল রাখতাম। সেখানে অনেকগুলো স্পিন্টার লেগেছে মোবাইলেও দু’টিতেও লেগেছিল। সেই মোবাইল যদি না থাকতো, স্পিন্টার যদি বুকে ঢুকতো ফুসফুস যদি বিকল হয়ে যেতো তাহলে তো আর সেই ঘটনা থেকে ফিরে আসতাম না। সেটিও মামলার আলামত হিসেবে আমি মোবাইলটি জমা দিয়েছি।’
এ ঘটনায় মামলার রায় কবে কার্যকর হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের যে আইনি প্রক্রিয়ায় সেটি দীর্ঘ। আমি গণমাধ্যমে দেখলাম, ডেথ রেফারেন্সের ফাইল উঠেছে।’