নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে এক দফা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। রাজপথে নামার আগে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি ঝালাই করে নিচ্ছে দলটি।
তৃণমূল ও রাজধানীর পর এবার ১০ বিভাগে করবে গণসমাবেশ। এসব কর্মসূচি সফলে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে ১০টি শক্তিশালী টিম। সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি, সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকসহ জেলা নেতাদের রাখা হয়েছে এসব কমিটিতে। টিমগুলো ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের সমাবেশ সফল করতে আজ প্রস্তুতি সভা ডাকা হয়েছে। দলটির নীতিনির্ধারকরা জানান, সারা দেশে দলের সাংগঠনিক শক্তি জানান দেওয়ার পাশাপাশি সরকারবিরোধী আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করাই এ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় টিমের প্রধান উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে বেশ শক্তিশালী। সরকারবিরোধী আন্দোলনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায় সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি। বিভাগীয় কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা তাদের সম্পৃক্ত করতে চাই। বিগত কর্মসূচিতে আমরা দেখেছি সাধারণ মানুষও অংশ নিয়েছে।
তিনি বলেন, বিভাগীয় সমাবেশ সফলে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি যত বেশি হবে বিএনপির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা তত বাড়বে। আর আস্থা বাড়লেই তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে নেমে আসবে।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১০ বিভাগে গণসমাবেশের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। চাল, ডাল, জ্বালানি তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, চলমান আন্দোলনে নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে এ সমাবেশ।
৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিভাগে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এ কর্মসূচি। এরপর ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুরে, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী। নয় বিভাগে গণসমাবেশের পর ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে দলটি। এসব কর্মসূচি সফল করতে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে ১০টি বিভাগীয় টিম গঠন করা হয়েছে। রংপুর ও ফরিদপুর ছাড়া প্রতিটি টিমে স্থায়ী কমিটির সদস্যকে প্রধান উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় নেতাকে করা হয়েছে দলনেতা।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভাগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি, জেলা ও মহানগরের সভাপতি/আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিব, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অথবা তাদের প্রতিনিধিকে করা হয়েছে কমিটির সদস্য। টিমে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদককে সমন্বয়কারী ও সহসাংগঠনিকদের সমন্বয় সহযোগী করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের টিমের প্রধান উপদেষ্টা স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, দলনেতা ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, ময়মনসিংহে প্রধান উপদেষ্টা স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও দলনেতা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান, খুলনায় প্রধান উপদেষ্টা স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলনেতা ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, রংপুরে প্রধান উপদেষ্টা দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও দলনেতা যুগ্ম-মহাসচিব হারুন-উর রশিদ, বরিশাল বিভাগে প্রধান উপদেষ্টা স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, দলনেতা যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ফরিদপুরে প্রধান উপদেষ্টা দলের ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, দলনেতা যুগ্ম-মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, সিলেট বিভাগীয় টিমের প্রধান উপদেষ্টা স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, দলনেতা যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কুমিল্লায় প্রধান উপদেষ্টা স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও দলনেতা ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, রাজশাহী বিভাগে প্রধান উপদেষ্টা স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও দলনেতা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু।
সবশেষ ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে দলটি। এ টিমের প্রধান উপদেষ্টা স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও দলনেতা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান।
জানা গেছে, বিভাগীয় সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগমের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় টিমের সদস্যরা বিভাগীয় নেতাদের সঙ্গে কর্মসূচি সফলে একাধিক প্রস্তুতি সভা করবেন। এসব সভায় মহানগর ছাড়াও বিভাগের সব জেলা, উপজেলা নেতাদের ডাকা হবে। কোথাও কোনো বিরোধ থাকলে তা সংশ্লিষ্ট টিমকে সমাধান করতে বলা হয়েছে। বিভাগীয় টিম ব্যর্থ হলে তা হাইকমান্ডকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমাবেশে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বাধা দিলে করণীয় কী হবে তা নিয়েও এসব বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিলে এবার প্রতিহত করার প্রস্তুতি থাকবে বলে জানান দলের নেতারা।
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করে একটা গণআন্দোলন গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে চাই। কিন্তু আমাদের কর্মসূচিতে আক্রমণ করা হলে এবার জনগণ তা প্রতিহত করবে।
বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধাক বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনে জনসম্পৃক্ত করার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি লক্ষ্য নিয়ে এসব সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাংগঠনিকভাবে কোথাও কোনো দুর্বলতা রয়েছে কিনা তা এ সমাবেশের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হবে। সেগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত তা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কেন্দ্রীয় সব নেতা, সাবেক এমপিদের সমাবেশ সফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা সমাবেশ সফলে কাজ করবে না কিংবা উপস্থিত থাকবে না তাদের ব্যাপারে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তারা।
বিএনপি নেতাদের মতে, ক্ষমতাসীন দলসহ অনেকেই বলে থাকেন সাংগঠনিকভাবে বিএনপির কোনো শক্তি নেই। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় দলটি সাংগঠনিকভাবে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ কারণে সাধারণ মানুষও বিএনপির আন্দোলনে রাজপথে সম্পৃক্ত হচ্ছে না। সেই সমালোচনার জবাব এ সমাবেশের মধ্য দিয়ে দেওয়া হবে। বিগত কয়েক বছরে বিএনপি দল গোছাতে কাজ করেছে। পুনর্গঠনের মাধ্যমে দল এখন অনেকটাই ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী। বিভাগীয় সমাবেশে ব্যাপক উপস্থিতিই প্রমাণ করবে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে কতটা মজবুত অবস্থানে আছে।
সিলেট বিভাগীয় টিমের দলনেতা যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীরা জেগে উঠেছে। আমরা চাই আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সম্পৃক্ত হোক। সেই লক্ষ্যে আমরা এবার বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করতে যাচ্ছি। আশা করছি এ সমাবেশের মধ্য দিয়ে সাংগঠনিক শক্তির পাশাপাশি জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারব।
ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ ফুঁসে উঠেছে। তাদের সঙ্গে নিয়ে এবার সরকারবিরোধী একটা গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। দলের প্রতিটি নেতাকর্মী আজ উজ্জীবিত। বিভাগীয় সমাবেশের মধ্য দিয়ে আমরা নেতাকর্মীদের মনোবল আরও চাঙা করতে চাই। এসব সমাবেশে শুধু নেতাকর্মী নয়, সাধারণ মানুষও যাতে অংশ নেয় সে প্রস্তুতিই আমরা নিচ্ছি।