উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়তে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার রাত আটটা ২০ মিনিটের দিকে রাজধানীর গুলশানের ফিরোজা বাসভবন থেকে বের হয় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর।
বিকেল থেকে খালেদা জিয়ার বাসার সামনে এবং আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলেও প্রিয় নেত্রীকে বিদায় জানাতে সেখানে জনতা ও নেতাকর্মীদের ঢল নামে। মানুষের ভিড় বেড়ে যাওয়ার কারণে খালেদা জিয়াকে বহন করা গাড়ি ধীর গতিতে এগিয়ে যেতে হয়েছে।
লন্ডনের উদ্দেশ্যে রাত ১০টায় কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্সে করে ঢাকা ছাড়বেন বিএনপি নেত্রী। লন্ডন পৌঁছেই খালেদা জিয়া সরাসরি ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ ভর্তি হবেন। পরে লন্ডন ক্লিনিক সুপারিশ করলে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হসপিটালে নেওয়া হতে পারে।
খালেদা জিয়ার বিদেশ সফরকে কেন্দ্র করে বিকেল থেকেই তাঁর বাসভবন ও আশপাশের সড়কে বিএনপির এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীরা ভিড় করেন। তার বাসভবন থেকে বিমান বন্দর পর্যন্ত সড়কের পাশে দলীয় নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন।
তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে জনতার ঢল সামাল দিতে আইনশৃংখলা বাহিনী এবং খালেদা জিয়ার বিশেষ নিরাপত্তা দলকে বেড় পেতে হতে হয়েছে। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর গুলশানের ফিরোজা বাসভবন থেকে বের হয়ে গুলশান দুই নম্বর চত্বর হয়ে বনানীর কামাল আতাতুর্ক দিয়ে বিমানবন্দর দিকে রওনা দেয়।
নেতা-কর্মী ও ভক্ত-সমর্থক থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের মানুষ তাকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজার সামনে থেকে বিমানবন্দর সড়কে জড়ো হয়েছেন। সুস্থ হয়ে দেশের রাজনীতিতে ফিরবেন বেগম জিয়া এমন প্রত্যাশা তাদের।
হাজারো নেতা–কর্মী রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তাঁদের নেত্রীকে বিদায় জানান। খালেদা জিয়ার রাত ন’টার দিকে বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা। বিমানবন্দর থেকে রাত ১০টায় কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনের উদ্দেশ্য যাত্রা করবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে বিদায় জানাবেন। দলীয় নেত্রীকে বিদায় জানাতে বিকেল থেকেই বিমানবন্দর সড়কের দুই পাশে অবস্থান নেন বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী। বিদায় জানানোর সময় জনদুর্ভোগ এড়াতে ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতাকর্মীদের বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়।
এদিকে, সন্ধ্যায় গুলশানে ফিরোজায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের শীর্ষ নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বেরিয়ে যান। ছটার দিকে একটি গাড়িতে করে বিএনপি নেত্রীর একটি লাগেজ বিমানবন্দরে পাঠানো হয়েছে বলে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে।
ইতিমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, র্যাব, এপিবিএন ও আনসার বাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা বিমানবন্দরের পুরো এলাকাজুড়ে অবস্থান নিয়েছে। অভ্যন্তরীণ রুটে সাধারণ যাত্রী চলাচলের বেশ কিছু জায়গায় বিকল্প পথ ব্যবহারের করতে বলা হয়েছে।
বিএনপি জানিয়েছে, ঢাকা থেকে খালেদা জিয়া প্রথমে যাবেন যুক্তরাজ্যে। সেখানে তাঁকে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হবে। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার পর যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নেওয়ার কথা রয়েছে।
সাত বছর পর লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেখা হবে। লন্ডনে ছেলের বউ জুবাইদা রহমান ও নাতনি জায়মা জারনাজ রহমানও খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাবেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, মা-ছেলের দীর্ঘ কাঙ্ক্ষিত এই সাক্ষাতে দেশ, দল ছাড়াও ভবিষ্যতের রাজনীতি নিয়ে অনেক কথাবার্তা হতে পারে।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। ২০১৮ সালে একটি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তাঁর অসুস্থতা বাড়ে। এর মধ্যে কয়েকবার তিনি জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও পড়েন।