রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি স্ত্রীকে নিয়ে রাজধানীর গোলাপশাহ মাজার রোড দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় রিকশার পেছনের দিক থেকে ছিনতাইকারীরা তাঁর স্ত্রীর গলায় থাকা সোনার চেইন নিয়ে পালিয়ে যায়। শনিবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় পল্টন থানায় অভিযোগ করেন ওই শিক্ষক। কিন্তু পুলিশের ‘ইতিবাচক অগ্রগতি’ না পেয়ে রোববার বিকেলে তিনি একই স্থানে ফেসবুক লাইভ (সরাসরি সম্প্রচার) করেন। ওই শিক্ষকের নাম অধ্যাপক সৈয়দ মো. আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি। ঈদের ছুটিতে তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
রোববার বিকেলে তিনি সাড়ে পাঁচ মিনিটের ফেসবুক লাইভ করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, গোলাপশাহ মাজারের একদিকে সচিবালয়, একদিকে গুলিস্তান, অন্যদিকে পুরান ঢাকা। জায়গাটি সবচেয়ে নিরাপদ অঞ্চল হওয়ার কথা ছিল। মাত্র ১০ গজ দূরে পুলিশ বক্স। সেখানে শনিবার তিনি যখন স্ত্রীকে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন এক ছিনতাইকারী তাঁর স্ত্রীর গলার চেইন নিয়ে চলে যায়। পাশে পুলিশের গাড়িতে তিনি সাহায্য চাইলেও পুলিশ তাঁকে কোনো সাহায্য করেননি।
ফেসবুক লাইভে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বলেন, ‘আমি যখন পুলিশের কাছে সাহায্য চাইলাম, পুলিশের একটি পিকআপ ছিল, অনেকগুলো পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। তারা আমাকে বলল, “আপনার ছিনতাই কোন জায়গায় হয়েছে, স্পটটা দেখান।” তাদের চোখের সামনে ছিনতাইকারী দৌড়ে চলে গেল, তারা ছিনতাইকারী ধরার বদলে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, কোন থানার অধীনে পড়েছে। পুলিশ বলছে, “ওটা পল্টন থানায় হয়েছে, আমরা দেখতে পারি না।” গোলাপশাহ মাজার একটা গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের মতো, সেটা ক্রাইম ট্রায়াঙ্গলে পরিণত হয়েছে। তিন অঞ্চলের পুলিশ তারা কেউ কাজ করছে না। একজন আরেকজনকে দোষ দিচ্ছে।’
অধ্যাপক আরও বলেন, ‘আমি নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমার হাতে তো কোনো ক্ষমতা নাই। কাজেই আমি এখানে যখন পুলিশকে বললাম, একজন আমাকে বলছে, “আপনি তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আপনি গাড়িতে কেন চলাচল করেননি। আপনি কেন রিকশায় চলাচল করেছেন।” আপনারা বলেন, আমরা কি গাড়িতে চলাচল করব? এ দেশের হাজার হাজার মানুষ রিকশা দিয়ে চলাচল করে। তাহলে তাঁদের নিরাপত্তা কে দেবে? আমার গাড়ি নাই জন্য কি আমার নিরাপত্তা থাকবে না। এখানে পুলিশ যে দাঁড়িয়ে আছে, তার কাজ কী? পিকআপে পুলিশ ছিল, তার কাজ কী?’
পল্টন থানায় অভিযোগ দিয়েছেন জানিয়ে লাইভে ওই অধ্যাপক আরও বলেন, এ নিয়ে পল্টন থানায় তিনি অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তারা কোনো যোগাযোগ করেনি। এই বাংলাদেশে নাগরিকদের সচেতনতা ছাড়া নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
নাগরিকদের জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বলেন, শনিবার তিনি যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁর স্ত্রী ভয়ে কুঁকড়ে গেছেন। এখানে যে পরিমাণ গাড়ি চলাচল করে, ছিনতাইকারীর আক্রমণে পড়ে গিয়ে অন্য গাড়ির নিচে চাপা পড়ার আশঙ্কা ছিল। তাঁর সৌভাগ্য, তাঁর স্ত্রী রিকশা থেকে পড়ে যাননি।
পল্টন থানার গুলিস্তান পুলিশ বক্সের ইনচার্জ উপপরিদর্শক ওবায়দুর রহমান বলেন, ঘটনাটি এমন জায়গায় ঘটেছে যেটা শাহবাগ ও পল্টন থানার সীমানায়। ঘটনার পর শাহবাগ থানা-পুলিশ ওনাকে নিয়ে কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালিয়েছে। পরে দেখা গেছে, ঘটনাস্থল পড়েছে পল্টন থানায়। বিষয়টি জেনে পুলিশের দুই-তিনটি দলের সঙ্গে তিনি নিজে কাজ করেছেন। তাঁকে (অধ্যাপক) মামলা করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি মামলা করেননি।
আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বলেন, ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ায় কোনো অগ্রগতি না দেখে তিনি ফেসবুকে লাইভ করেছেন। তিনি একটি অভিযোগ দিয়েছেন। মামলা করেননি। আর যে অভিযোগ তিনি দিয়েছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতেই পুলিশ কাজ করতে সক্ষম। মামলার প্রয়োজন পড়ে না।
পল্টন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, তিনি যত দূর শুনেছেন, ঘটনাটি ঘটার পর তিনি পুলিশের কাছে যান। তাঁকে মামলা করার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু উনি মামলা করবেন না বলে জানান। একজন সচেতন নাগরিক হয়ে উনি মামলা না করে লাইভ করেছেন। লাইভ করলে তো আইনে বলা নেই যে ঘটনার সমাধান হবে। আইনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। মামলা করলে তাঁরা আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।