দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছু থমকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আনিছুর রহমান।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচনে ২ হাজারের মতো অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবে। এবারে নির্বাচনের আন্তর্জাতিক ডাইমেশনটা দেশের অর্থনীতি, সামাজিক স্বার্থে আমাদের মাথায় রাখতে হবে। কোনো রকম যদি অনাচার ধরা পড়ে, সেটা অবশ্যই ক্ষমতা দিয়ে প্রতিবিধান করবেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি প্রজাতন্ত্র। প্রজাতন্ত্র মানে হচ্ছে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে সরকার পরিচালিত হবে। নির্বাচনে যারা সংসদে বসবেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ যারা তারাই সংবিধান গঠন করবেন। নির্বাচন আমাদের দ্বারপ্রান্তে। নির্বাচন নিয়ে দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক রয়েছে। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের যেমন বাগবিতণ্ডা হচ্ছে, সহিংসতাও হয়েছে। আমাদের নির্বাচনে আরেকটি কারণে মনোযোগী হতে হবে, কারণ রাজনৈতিক একটা অংশ নির্বাচন বর্জন করেছে। সাধারণত নির্বাচন খুব উৎসবমুখর হয়।
সিইসি বলেন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের সময় নির্বাচনটা পরিচালনা করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সে নির্বাচনে মুসলীম লীগের ভরাডুবি হয়েছিল। অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে। এরপর সব সময়ই নির্বাচন উৎসমুখর হয়েছে। সে বিষয়টা এবার ক্ষুণ্ন হয়েছে, যেহেতু একটা অংশ নির্বাচন বর্জন করেছে। ১৪ সালে নির্বাচন বর্জন হয়েছিল, সহিংসতা হয়েছিল। সেটাও একটা চ্যালেঞ্জ, আপনারা জানেন। ১৮ সালের নির্বাচন নিয়েও কিছু বিতর্ক হয়েছে। নির্বাচন সার্বিকভাবে অংশগ্রহণমূলক ছিল। কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না। পরবর্তীতে সেটা নিয়ে কিছু বিতর্ক হয়েছে। যার ফলে আমাদের দেশে প্রচলিত যে নির্বাচনটা নিয়ে সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা ক্ষুণ্ন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আর মাত্র ছয়দিন পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন যে কোনো মূল্যে সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক করতে হবে। সেই উদ্দেশ্যে ২৮ নভেম্বর থেকে মাঠে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা আছেন। আচরণবিধি প্রতিপালনে তারা কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। এবারই প্রথম প্রতিটা আসনভিত্তিক সার্বক্ষণিক জুডিশিয়াল অফিসার দিয়ে ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি করা হয়েছে। উভয় মাঠে খুব ভালো কাজ করেছে। এক মাসেরও বেশি সময় পুরো মাঠ চষে বেড়িয়েছি। সিইসিসহ অন্যান্য কমিশনাররা দেশের বিভিন্ন স্থানে গেছেন।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি, আচরণবিধি প্রতিপালনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ম্যাজিস্ট্রেটরা। একই সঙ্গে যে অভিযোগগুলো তাদের কাছে এসেছে, আর তারা যেটা সমাধান করতে পারেনি বা রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং অফিসার সেগুলো ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটিকে দিয়েছে, তারা কারও কারও হাজিরা চেয়েছেন। কাউকে শোকজ করেছেন, লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছেন। এভাবে নিষ্পত্তি করেছেন। কিছু আমাদের কাছে এসেছে, আমরা সেগুলোর ব্যবস্থা নিয়েছি।
সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ইসির চেষ্টার শেষ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যান্য যে কোনো নির্বাচনের তুলনায় এবার সহিংসতা খুব কম। যদিও ক্ষেত্র বিশেষে দু-একটা ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া আচরণবিধি লঙ্ঘন অন্যবারের চেয়েও কম। তারপরও আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগতে চাই না।