সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম শীর্ষ নেতা তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে সোহেল তাজকে রহস্যময় ব্যক্তিরা গোপনে অনুসরণ করছেন। বুধবার রাতে এমন একটি ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ে।
জানা যায়, ওই ব্যক্তি তাঁকে অনুসরণ করে ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত চলে আসে। এখানে এসে সোহেল তাজকে গাড়ি থামাতে বাধ্য করে। পরে রহস্যজনকভাবে তাঁকে ছেড়ে দিয়ে চলেও যায়।
সোহেল তাজের ধারণা, ওই ব্যক্তি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য। পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের মতো বর্তমান সরকারের মেয়াদেও একই কায়দায় হয়রানি করা তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।
এ ঘটনায় সোহেল তাজ বেশ আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ। তিনি এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং সেনাবাহিনীর প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
তিনি রহস্যজনক ওই ঘটনাকে তুলে ধরে বুধবার রাতে নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি পোস্ট করেন। পোস্টের সঙ্গে তিনি গাড়ির ড্যাশক্যাম থেকে নেওয়া একটি ছবিও শেয়ার করেছেন। ছবিতে গাড়ির জানালা দিয়ে একজন মোটরসাইকেল আরোহীকে দেখা যাচ্ছে, যিনি গাড়িটির ঠিক পাশে বাইকটির উপর বসে আছেন।
ফেসবুকে সোহেল তাজ লিখেছেন, ‘আজকে রাতে কাজ থেকে ফেরার সময় একটি খুবই আতঙ্কজনক ও রহস্যজনক ঘটনার শিকার হই। একজন মোটরসাইকেল আরোহী আমাকে সংসদ ভবন থেকে ফলো করে ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে চলে আসে এবং একটা সময় তার বুকে লাল-নীল বাতি জ্বালিয়ে আমাকে থামতে বলে। আমি থামার পর তার পরিচয় জানতে চাই এবং আমাকে কেন থামতে বললেন তা তাকে জিজ্ঞেস করি। প্রতিউত্তরে সে আমাকে বলে যে তাদের লোক আসছে আর আমার তাদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আমি আবার তার পরিচয় জানতে চেলাম এবং তাকে জিজ্ঞেস করলাম তিনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন কিনা। জবাবে সে আমাকে বললো আমি আপনাকে চিনি- আপনি সোহেল তাজ। তারপর সে মোবাইল ফোনে বললো যে সে আমাকে থামিয়েছে এবং লোকেশন জানিয়ে আসতে বললো। আমি আবার তার পরিচয় জানতে চেলাম এবং কারা আসছে আর কেন আমাকে থামিয়েছে জানতে চাইলাম। সে কোন উত্তর না দিয়ে আবার ফোনে কথা বললো তারপর আমাকে বললো চলে যেতে আর সেও মোটরসাইকেল ঘুরিয়ে চলে গেল।
ঘটনা প্রবাহ থেকে স্পষ্ট সোহেল তাজ মোটেও কট্টর ও সুবিধাভোগী আওয়ামীলীগার ছিলেন না। তাই এই সরকারের মেয়াদে নিরাপত্তা ও কৌশলগত কারণে গোয়েন্দারা যদি আওয়ামীলীগ নেতাদের অনুসরণ করেও থাকেন, তাতেও সোহেল তাজকে অনুসরণ করার কথা নয়।
তবে কী গোয়েন্দাদের মধ্যে এখনো পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের কট্টর সদস্য আছেন, ছাত্রদের আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন জানানোয় সোহেল তাজের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে তারা সোহেল তাজকে অনুসরণ করতে চান।
শুধু অনুসরণ নয়, ওই ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য যে অন্য কিছু ছিল, তা সোহেল তাজের পোস্ট থেকেই স্পষ্ট। কারণ অনুসরণকারী ব্যক্তি সোহেল তাজের গাড়ি থামিয়ে ফোনে অন্য এক বা একাধিক ব্যক্তিকে এই তথ্য জানিয়েছেন। সোহেল তাজের অবস্থান জানিয়ে তাদেরকে সেখানে আসতে বলেছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আবার চলেও গেছেন। প্রশ্ন উঠতেই পারে, তবে কী তারা সোহেল তাজকে অপহরণ করতে চেয়েছিলেন? কিন্তু পরিবেশ অনুকূল না হওয়ায় পরিকল্পনা আজকের মতো বাদ দিয়েছেন। নাকি সোহেল তাজের গাড়িতে ড্যাশ ক্যাম থাকার বিষয়টি অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তিদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, আর সব কিছু রেকর্ড থেকে যাবার ভয়ে তারা বেশিদূর এগুনো নিরাপদ মনে করেননি?