বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা আরও শক্তি সঞ্চার করে উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পাওয়া সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় মোখা পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। এ কারণে পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বরগুনাও এই সংকেতের আওতায় রয়েছে।
৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত বলতে বোঝানো হয় যে, প্রচণ্ড বা তীব্রতর ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে বন্দর। ঝড়ে বাতাসের একটানা গতিবেগ ৮৯ কিলোমিটার বা তার চেয়েও বেশি হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি বন্দরকে বামদিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
মহাবিপদ সংকেত জারি থাকার পরেও বরগুনার অধিকাংশ আশ্রয়কেন্দ্র তালাবন্ধ রয়েছে এখনও। শনিবার (১৩ মে) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বরগুনার উপকূল এলাকার অধিকাংশ আশ্রয়কেন্দ্রই তালাবদ্ধ রয়েছে। অনেক আশ্রয় কেন্দ্রে জ্বালানো হয়নি বাতি। এদিকে ঝড়ের প্রকোপ না থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন না কেউই, এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
দক্ষিণ ইটবাড়িয়া এলাকার নজির হোসেন বলেন, দক্ষিণ ইটবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিই আশ্রয় কেন্দ্র। এই স্কুলের চাবি এক শিক্ষকের কাছে রয়েছে। তার বাড়ি কাছেই। লোকজন আসছে না বলে আশ্রয়কেন্দ্রটি খোলা হয়নি।
পায়রা নদী তীরবর্তী মধ্য বুড়িরচর গ্রামের হারুনর রশীদ বলেন, মধ্য বুড়িরচর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারের চাবি আমার কাছে রয়েছে। কিছুক্ষণ আগে আমি স্কুল খুলে দিয়েছিলাম। পরে রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম তাই বন্ধ ছিল। তবে কোনো লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে আসছে না।
স্থানীয় সিপিপি সদস্য মো. ফেরদৌস বলেন, আমি এই ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের দায়িত্বে আছি। লোকজনের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের কোনো জনসচেতনতা নেই। আবহাওয়া এখনো খারাপ না হওয়ায় কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে আসছে না। এখনকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সার্বক্ষণিক খোলা রাখা হবে। মানুষ যেকোনো সময়ে আশ্রয় নিতে পারবে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) হাবিবুর রহমান বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলায় ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সাড়ে ৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবক সারা জেলায় কাজ করছে। জেলা প্রশাসন ও রেড ক্রিসেন্ট থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। তবে কেন আশ্রয়কেন্দ্রগুলো তালাবদ্ধ তা খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় বরগুনায় মোট ৬৪২ টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মোট দুই লাখ ৬৯ হাজার ৫১০ জন আশ্রয় নিতে পারবেন। এছাড়াও জেলায় নয় হাজার ৬১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন।
দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলায় ২৯৪ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগ পরবর্তী জরুরি ত্রাণ বাবদ নগদ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এছাড়া ঢেউটিন, কম্বল ও শুকনো খাবার মজুত রয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি জরুরি সাড়াদান কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।