সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

মিথ্যা মামলা করে বাদী কারাগারে, ভুয়া তদন্ত করে আসামি পুলিশ

চট্টগ্রামে মিথ্যা মামলা করে বাদী, সাক্ষী এবং ভুয়া তদন্ত করে পুলিশের তিন কর্মকর্তা শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছেন চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক ফেরদৌস আরা। মামলাগুলো চট্টগ্রাম-১ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন। এদিকে ভুয়া মামলা থেকে খালাস পেয়েছে চার শিশু। মিথ্যা মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তাদের আসামি করে বিচারকের মামলা করার বিষয়টি নজিরবিহীন বলছেন মানবাধিকার আইনজীবীরা।

যেভাবে ফাঁসানো হয় তিন শিশুকে
চট্টগ্রামে অলিম্পিক বিস্কুটের পরিবেশক কে এম ফোরকানের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করত তিন শিশু। বেতন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় তারা চাকরি ছেড়ে দেয়। এতে ক্ষুব্ধ ফোরকান শিশুদের শায়েস্তা করতে মিথ্যা অভিযোগে ২০২০ সালের ২৩ জুলাই পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ২২ জুলাই নগরীর হিলভিউ এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফেরার পথে ছুরি ধরে এক লাখ ৫৬ হাজার টাকাসহ একটি ব্যাগ ছিনতাই করে ওই তিন শিশু।

মামলাটি তদন্ত করে ঘটনা ‘সঠিক’ উল্লেখ করে শিশুদের অভিযুক্ত করে ১৮ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেন পাঁচলাইশ থানার এসআই কাজী মাছুম রহমান। এর পর শুরু হয় বিচার। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ তিন শিশুর বিরুদ্ধে প্রমাণ না পাওয়ায় গত ২৪ জুন খালাস দেন। সাক্ষ্য দেওয়ার সময় জেরায় বাদী ফোরকান স্বীকার করেন, ওই তিন শিশু চাকরি ছাড়ায় রাগের মাথায় মিথ্যা মামলা করেছেন।

এর পর ৫ আগস্ট ফোরকান ও সাক্ষী ইফতেখার হোসেনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৭৭ ও ১৮১ ধারায় মামলা করেন বিচারক ফেরদৌস আরা। এ ছাড়া তিনি ভুয়া তদন্ত করার অপরাধে এসআই কাজী মাছুম রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেন। ৯ আগস্ট ফোরকানকে কারাগারে পাঠান আদালত।
রায়ের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে, তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তের অস্বাভাবিকতা, ঘটনা ও পারিপার্শ্বিকতা একসঙ্গে বিবেচনা করেননি। তিনি বাদীর দ্বারা অন্যায়ভাবে প্রভাবিত হয়ে তিন শিশুর বিরুদ্ধে অগ্রহণযোগ্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।

শিশুকে ফাঁসিয়ে আসামি দুই এসআই
বৈধভাবে বাহরাইন থেকে চাচার পাঠানো স্বর্ণবার অবৈধ দেখিয়ে এক শিশুর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল পতেঙ্গা থানায় স্বর্ণ চোরাচালান মামলা করেন পতেঙ্গা থানার এসআই আনোয়ার হোসেন। মামলা রেকর্ড ও তদন্তে পদে পদে জালিয়াতি এবং কারসাজির প্রমাণ উঠে আসে সাক্ষ্য ও জেরায়। এসআই আনোয়ার ঘষামাজা করা গোল্ড টেস্টিং ল্যাবের প্রতিবেদন দাখিল করেন আদালতে। শিশুটিকে ফাঁসাতে টেম্পারিং করা টেস্টিং প্রতিবেদন তৈরি করেন। মামলা রেকর্ড করার আগে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুটি স্বর্ণবারের শুল্ক পরিশোধের রসিদ দেখালেও তা আমলেই নেয়নি পুলিশ।
সংশোধানাগারে যাওয়ার পর শুল্ক পরিশোধের কাগজ আদালতে জমা দিয়ে জামিন পায় ভুক্তভোগী শিশু। শুল্ক পরিশোধ করেই দুই স্বর্ণবার আনা হয়েছে– জামিন আদেশে মহানগর দায়রা জজ এ কথা উল্লেখ করার পরও শিশুটিকে অভিযুক্ত করে ২০১৯ সালের ৩ অক্টোবর অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পতেঙ্গা থানার এসআই সুবীর পাল। তিনি আদালতের ওই আদেশ আমলেই নেননি। সর্বশেষ দুই এসআই আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেন।

পরে সাক্ষ্য ও জেরায় জালিয়াতির বিষয়টি উঠে আসে। ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর নির্দোষ শিশুকে চোরাচালান মামলায় ফাঁসানোর অপরাধে এসআই আনোয়ার ও সুবীরের বিরুদ্ধে মামলা করেন বিচারক ফেরদৌস আরা। তিনি ২০২২ সালের ৯ অক্টোবর মিথ্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। এতে শিশুটি খালাস পায়। দুটি বৈধ স্বর্ণবারের মধ্যে একটি স্বর্ণবার লোপাট করতে না পেরে দুই এসআই এ কাণ্ড ঘটান বলে আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন দুই পুলিশ সদস্য।
এসআই কাজী মাছুম রহমান বলেন, ‘আদালতের বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না। তবে বাদী, সাক্ষীর বক্তব্য ও প্রমাণের ভিত্তিতেই তদন্ত করে চার্জশিট দিয়েছি, ভুয়া তদন্ত করিনি।’
অপর মামলায় অভিযুক্ত এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মিথ্যা মামলা দায়ের ও সাক্ষ্য দেওয়া নিয়ে যে মামলাটি হয়েছে, সেটি হাইকোর্টের নির্দেশে বর্তমানে স্থগিত। আমরা আদালতে নির্দোষ প্রমাণে আইনি লড়াই করছি।’

‘মামলা দুটি অন্ধকারে আশার আলো’
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী মো. কফিল উদ্দিন বলেন, ‘বিস্কুট কারখানায় চাকরির বেতন নিয়ে বিরোধে তিন শিশুকে ছিনতাইয়ের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেন মালিক। বিচারের সময় আদালতে মিথ্যা মামলা করার কথা স্বীকার করেন বাদী। কিন্তু পুলিশ মিথ্যা মামলাকে সঠিক বলে চার্জশিট দেয়। চোরাচালানের মামলায়ও এক শিশুকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ঘটনায় মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন বিচারক ফেরদৌস আরা। দুটি মামলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন। দুটিতেই আমি সাক্ষী।’
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি অ্যাডভোকেট আকতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘মিথ্যা মামলা করা, সাক্ষ্য দেওয়া, ভুয়া তদন্ত করে চার্জশিট দেওয়া– সবই ফৌজদারি অপরাধ। এসব করে সচরাচর কেউ শাস্তির মুখোমুখি হয় না। এসব অপকর্ম করে বাদী, সাক্ষী ও তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ সদস্যরা শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন। এ ঘটনা সমাজে, পুলিশে, বিচারাঙ্গনের সবার কাছে একটি কঠোর বার্তা পৌঁছে দেবে– অপরাধ করলে সাজা পেতে হবে। ব্যতিক্রম দুটি মামলা অন্ধকারে আশার আলো।’

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!