ক্ষমতাসীন সরকার হঠাতে নেতা-কর্মীদের ‘রাজপথ দখলে’র প্রস্তুতি নেওয়ার ডাক দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) রাজধানীর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে এক সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব এই আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘‘এই সংগ্রাম শুরু হয়েছে, লড়াই শুরু হয়েছে, যুদ্ধ শুরু হয়েছে, এই লড়াই আমাদের প্রাণের লড়াই, আমাদের বেঁচে থাকার লড়াই, এই লড়াই বাংলাদেশকে লক্ষ্য করবার লড়াই। এটা বিএনপির নয়, তারেক রহমানের নয়, আমাদের নয়, এই লড়াই বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে বাঁচাবার লড়াই।”
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশের মঞ্চের ব্যানারে লেখা আছে- জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের নজিরবিহীন লোডশেডিং, গণপরিবহনের ভাড়াবৃদ্ধি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে নিহত নুরে আলম ও আব্দুর রহিম হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ।’ ব্যানারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বড় ছবির পাশাপাশি জিয়াউর রহমানের ছবিও রয়েছে।
নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পাঁচটি ট্রাককে একসাথে করে উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। দুপুর ২টায় শুরু হয়ে সমাবেশ শেষ হয় বিকাল ৬টার পর। ফকিরাপুলের মোড় থেকে কাকরাইল পর্যন্ত পুরো সড়ক ও ফুটপাতে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর নয়া পল্টনের সামনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে বিএনপি সমাবেশ করেছিল।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এই লড়াইয়ে অবশ্যই আমাদের শরিক হতে হবে, আমাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, রাজপথ আমাদেরকে দখল করতে হবে। রাজপথের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আমরা অবশ্যই এই দানবীয় সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই আমরা একটা জনগণের সরকার, জনগণের রাষ্ট্র, জনগণের একটা সমাজ তৈরি করবো।”
সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, আর কালবিলম্ব না করে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। কারণ আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন, আপনারা মানুষের সমস্যা সমাধান করতে পারছেন না। সুতরাং আপনাদেরকে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিয়ে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নতুন পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে, সরকার গঠন করতে হবে।”
আগামী ২২ আগস্ট থেকে সারা দেশে উপজেলা-জেলা-মহানগর পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি অব্যাহতভাবে চলবে বলে ঘোষণা করেন তিনি।
‘‘আপনারা জানেন, আগামী রবিবার জেলা পর্যায়ে সমাবেশ আছে। সেই সমাবেশগুলো আমরা করব। এরপর আগামী ২২ তারিখ থেকে সকল উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে আমরা ছড়িয়ে পড়ব এবং সেই একইভাবে প্রত্যেকটি উপজেলা, জেলায় ও মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এই সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করব ইনশাল্লাহ।’’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও আমিনুল হকের সঞ্চালনায় এই সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, জয়নাল আবেদীন, আমান উল্লাহ আমান, আফরোজা খান রিতা, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী, আবদুস সালাম আজাদ, দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।