ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার কাছে অস্ত্র বিক্রির বিরুদ্ধে উত্তর কোরিয়াকে আবারও সতর্ক করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করলে উত্তর কোরিয়াকে ‘মূল্য’ চোকাতে হবে।
পিয়ংইয়ং মস্কোর সাথে সম্ভাব্য অস্ত্র চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করছে বলে ওয়াশিংটন সতর্ক করার পর এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হলো। বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য উত্তর কোরিয়া যদি রাশিয়ার কাছে অস্ত্র বিক্রি করে তবে পিয়ংইয়ংকে ‘মূল্য’ চোকাতে হবে বলে হোয়াইট হাউসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা সতর্ক করে দিয়েছেন। মূলত পিয়ংইয়ং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে এবং এর মধ্যেই পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিকে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হলো।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান মঙ্গলবার বলেছেন, উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়ার মধ্যে অস্ত্র আলোচনা ‘সক্রিয়ভাবে অগ্রসর হচ্ছে’ বলে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘একটি আধুনিক সার্বভৌম রাষ্ট্রের অন্তর্গত অঞ্চল জয় করার চেষ্টার জন্য বা শস্যের সংরক্ষাণাগার এবং প্রধান শহরগুলোর বিভিন্ন অবকাঠামো আক্রমণ করার জন্য রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করলে তা উত্তর কোরিয়ার ওপর ভালোভাবে প্রতিফলিত হবে না। এর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তাদের মূল্য চোকাতে হবে।’
এর আগে গত সোমবার বাইডেন প্রশাসনের অন্য একজন কর্মকর্তা বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে রাশিয়া সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। চলতি মাসেই এই সফর হতে পারে এবং পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে রাশিয়ায় অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন কিম।
ক্রেমলিন অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবির বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং জোর দিয়ে বলেছে, দুই নেতার মধ্যে সম্ভাব্য সরাসরি আলোচনার রিপোর্ট সম্পর্কে ‘কিছু বলার নেই’। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টি বেশ জোরালোভাবেই প্রকাশ পেয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু গত জুলাই মাসে উত্তর কোরিয়া সফর করেন এবং কিমের সঙ্গে দেখা করেন। এছাড়া কিম এবং পুতিনও গত মাসে তাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার অঙ্গীকার করে চিঠি বিনিময় করেন।
মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেলও রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহের বিরুদ্ধে উত্তর কোরিয়াকে সতর্ক করে দিয়েছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, অস্ত্র পাওয়ার জন্য রুশ কর্তৃপক্ষের পিয়ংইয়ংয়ের মুখাপেক্ষী হওয়ার বিষয়টি আসলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতাকেই তুলে ধরছে।
প্যাটেল বলেন, ‘আমাদের নিষেধাজ্ঞা, রপ্তানি বিধিনিষেধ এবং এ সংক্রান্ত প্রভাবের কারণে ইউক্রেনের যুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে এমন অস্ত্রের জন্য রাশিয়া বিশ্বজুড়ে মরিয়া অনুসন্ধান করতে বাধ্য হয়েছে।’
অবশ্য মস্কোতে অস্ত্র পাঠানো হলে ওয়াশিংটন পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে ঠিক কী পদক্ষেপ নেবে জানতে চাইলে প্যাটেল সেটির বিশদ বিবরণ দেননি। তবে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার অংশীদারদের সাথে সমন্বয় করে ‘প্রয়োজনে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে’।
টানা দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ এই আগ্রাসনের শুরু থেকেই পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিকে অস্ত্রসহ সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো।
অপরদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে সহায়তা না করতে চীনসহ প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিপক্ষ দেশগুলোকে সতর্ক করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত রাশিয়াকে অস্ত্র দেওয়া নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তার বক্তব্য এমন সময়ে সামনে এলো যখন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতার সম্ভাব্য রাশিয়া সফর নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে।
এছাড়া কয়েক সপ্তাহ আগেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং কিম জং উন তাদের দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চিঠি বিনিময় করেছেন।
পুতিন সেই সময় এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে, আমরা দুই দেশের জনগণের কল্যাণ ও কোরীয় উপদ্বীপ এবং সমগ্র উত্তর-পূর্ব এশিয়ার দৃঢ় স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য সকল ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করব।’
অবশ্য উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়া উভয়ই এর আগে অস্ত্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এছাড়া উত্তর কোরিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে রাশিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে। পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি জোর দিয়ে বলেছে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলোর ‘আধিপত্যবাদী নীতি’ মস্কোকে তার নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষার জন্য সামরিক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে।