যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে পাল্টা শর্ত বেঁধে দিলো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের রাষ্ট্রীয় দফতর ক্রেমলিন।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজের এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বাইডেন বলেন, ‘পুতিন যদি সত্যিই নয় মাস ধরে যুদ্ধ বন্ধে আগ্রহী হন, তাহলে আমি তার সঙ্গে সংলাপে বসতে প্রস্তুত।’ যুক্তরাষ্ট্রে সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোও ওই সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন। শুক্রবার তারই পাল্টা জবাব দিল ক্রেমলিন।
সংবাদ সম্মেলনে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘বাইডেন আসলে কী বলেছেন? তিনি বলেছেন, পুতিন যদি ইউক্রেন ত্যাগ করেন, তাহলেই কেবল আলোচনায় বসা সম্ভব।
নিশ্চিতভাবেই মস্কো ওই শর্ত মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। সুতরাং ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান চলবে। যেকোনো আলোচনা বা সমঝোতার আগে সংযুক্ত চার অঞ্চলকে স্বীকৃতি দিতে হবে।’ পেসকভ বলেন, রাশিয়ার স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই বাইডেনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি ছিলেন পুতিন। তবে ওয়াশিংটনের অবস্থান সম্ভাব্য আলোচনা জটিল করে তুলছে।
ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে খোলামেলা ও ইতিবাচক বার্তা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনার সম্ভাব্যতা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে হোয়াইট হাউজ ও ক্রেমলিনের কর্মকর্তাদের কাছে প্রশ্ন তোলা হলেও স্পষ্ট ইতিবাচক কোনো জবাব আসেনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এখনই পুতিনের সঙ্গে বসতে যাচ্ছি, এমন নয়। কারণ এখনো এমন কোনো আভাস পাইনি যে তিনি যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চাচ্ছেন। তিনি যদি যুদ্ধ শেষের আগ্রহ দেখান, তাহলে ফরাসি ও ন্যাটো বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করে আমি খুশি মনে পুতিনের সঙ্গে বসব তার মনে কি আছে সেটা জানার জন্য। আমি পুতিনের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত আছি যদি তিনি যুদ্ধ শেষের উপায় খুঁজতে আগ্রহী হন। তবে কথা হচ্ছে তার সঙ্গে সংলাপের আগে আমি বিষয়টি নিয়ে ন্যাটো শরিকদের সঙ্গে পরামর্শ করব।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সরকারগুলো রাশিয়ার অফশোর তেল কেনার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। ইইউ রাশিয়াকে প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলার দেবে। বিষয়টির সঙ্গে জড়িত এক কূটনীতিবিদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ডয়চে ভেলে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কম দামে রাশিয়ার সামুদ্রিক অপরিশোধিত তেল কেনার মূল প্রস্তাব ছিল বিশ্বের শীর্ষ সাত অর্থনীতির জোট ‘জি-৭’ এর। ‘জি-৭’ এর প্রস্তাব ছিল, বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দাম সামগ্রিকভাবে ৫ শতাংশ কমাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ব্যারেলপ্রতি ৬৫ ডলার থেকে ৭০ ডলার দরে তেল কিনতে হবে। তবে পোল্যান্ড ‘জি-৭’ এর প্রস্তাবিত দামের বিরোধিতা করে।
পোল্যান্ড লিথুয়ানিয়া ও এস্তোনিয়াকে সমর্থন করে। এই তিনটি দেশের অভিযোগ ছিল, প্রস্তাবিত মূল্যে কেনা ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার যথেষ্ট অর্থ প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
ওই কূটনীতিবিদ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় দেশগুলোর সরকার এ বিষয়ে একমত হলেও শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে লিখিত অনুমোদন দেওয়ার কথা। ইন্টারন্যাশনাল অ্যানার্জি এজেন্সি (আইইএ)-এর পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে, রাশিয়ান অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলার করে বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ৫ শতাংশ কমিয়েছে।