যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে সিঙ্গাপুরগামী উড়োজাহাজের মাঝ আকাশে তীব্র ঝাঁকুনির শিকার হওয়ার ঘটনাকে ‘চরম ভীতিকর’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন এর যাত্রীরা। ওই ঝঁকুনিতে প্লেনের ভেতরে মানুষ এবং জিনিসপত্র ছিটকে পড়েছিলো।
বিবিসি জানিয়েছে, জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পর উড়োজাহাজটি ব্যাংককে জরুটি অবতরণ করে।
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের বলেছে, বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর মডেলের ওই উড়োজাহাজে থাকা এক যাত্রীর মৃত্যু ও ৩১ জন মানুষ আহত হয়েছেন।
ব্যাংককের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ঘটনায় ৭৩ বছর বয়সী এক ব্রিটিশ ব্যক্তি সম্ভবত হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।
কেবিন ক্রুরা যখন যাত্রীদের খাবার দিচ্ছিলেন তখনই হঠাৎ করে উড়োজাহাজটি নিচের দিকে যেতে থাকে এবং তীব্র ঝাঁকুনি খায়। অনেক যাত্রী এদিক-ওদিক ছিটকে যান। অনেকে শূন্যে ডিগবাজি খান।
অ্যান্ড্রু ডেভিস নামের এক যাত্রী বলেন, ঘটনার প্রথম কয়েক সেকেন্ড ভয়ানক চিৎকার এবং কোনো কিছু খুব জোরে পড়ার ‘ধপাস’ শব্দ কানে বাজছিলো। আমার যা মনে আছে, তাতে দেখেছি জিনিসপত্র প্লেনের ভিতর উড়ুছিলো যেন।
বিবিসিকে ডেভিস বলেন, আমার সারা গায়ে কফিতে ঢেকেছিলো। এটা ভয়ংকর অবিশ্বাস্য এক টারবুলেন্স ছিলো।
আরেক যাত্রী বলেন, বিমানটি হঠাৎ করেই কাঁপতে শুরু করে।
জাফরান আজমির নামের এক শিক্ষার্থী রয়টার্সকে বলেন, যা ঘটছিলো তা মেনে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। এমন ভয়ংকরভাবে প্লেনটা পড়তে শুর করে.. তখন কারও সিট বেল্প বাঁধা না থাকায় প্রায় সবাই ছাদের সঙ্গে বাড়ি খায়।
জাফরান আরও বলেন, কিছু মানুষ লাগেজ কেবিনের সঙ্গে এত ভয়ানকভাবে ধাক্কা খায় যে, তাতে লাইট ও অক্সিজেন মাস্কগুলো যেখানে থাকে তা ভেঙে যায়।
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, প্রায় ১০ ঘণ্টা ওড়ার পর ৩৭ হাজার ফুট উপরে মিয়ানমারের ইরাবতি বেসিনের ওপর ভয়ংকর এই টারবুলেন্স ঘটে।
বিশ্বের অন্যতম নামী এই উড়োজাহাজ সংস্থাটি মৃত ব্যক্তির পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে। যদিও ওই যাত্রীর নাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
সংস্থাটি জানিয়েছে তারা আহত যাত্রীদের চিকিৎসা সেবা দিতে থাই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছে এবং অতিরিক্ত একটি দল আরও সহযোগিতার জন্য ব্যাংককে পাঠিয়েছে।
লন্ডন থেকে সিঙ্গাপুরগামী সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ওই উড়োজাহাজে মোট ২১১ জন যাত্রী ও ১৮ জন ক্রু ছিলেন। যাদের মধ্যে ৫৬ জন অস্ট্রেলীয়, ৪৭ জন যুক্তরাজ্য, ৪১ জন সিঙ্গাপুরের, ২৩ জন নিউজিল্যান্ড, মালয়েশিয়ার ১৬ জন, ফিলিপিন্সের পাঁচ, আয়ারল্যান্ডের ও যুক্তরাষ্ট্রের চার জন করে, তিন জন ভারতীয়; ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, স্পেন এবং কানাডার দু’জন করে যাত্রী ছিলেন। এছাড়া জার্মানি, ইসরাইল, আইসল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়ার একজন করে যাত্রী ছিলেন।
অ্যালিসন বার্কার নামে এক ব্যক্তি বলেছেন, তিনি তার ছেলে জশের কাছ থেকে একটি বার্তা পেয়েছেন। জশ ইন্দোনেশিয়ার বালি যাওয়ার জন্য ওই ফ্লাইটে ছিলেন। জশ তার বাবাকে বলেছেন, আমি ভয় দেখাতে চাই না। তবে এটা ঠিক যে আমি একটি পাগলা ফ্লাইটে আছি। উড়োজাহাজটি জরুরি অবতরণ করেছে। আমি তোমাদের ভালোবাসি। এই বার্তা পাওয়ার পর জশের সঙ্গে ফের যোগাযোগের জন্য অ্যালিসনকে দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। তিনি বলেন, প্রথম মিন্টি সে সিট বেল্প পরা অবস্থায় ছিলো। পরে সে অন্যদের সঙ্গে নিজেকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে।
আরেক ব্রিটিশ নাগরিক জেরি বলেন, তিনি তার ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছিলেন। উড়োজাহাজটি টারবুলেন্সে পড়ার আগে কোনো সতর্ক বার্তা দেয়নি। আমি ও আমার স্ত্রীর মাথা প্লেনের ছাদে বাড়ি খেয়েছিলো। আর যা মনে পড়ে, কিছু লোকককে আমি ডিগবাজি খেতে দেখেছি।
ঘাড়ে আঘাত পাওয়া আরেকজন বলেন, আমাদের সৌভাগ্য। পরিবারের সবাই বেঁচে আছে। টারবুলেন্স যে হচ্ছে এমন কোনো কিছু বুঝতেই পারিনি। হঠাৎ করে ছাদে ধাক্কা খেলাম। যেন আমি এমনি এমনি উঠেছি।
সাধারণত, মেঘের মধ্যে চলার সময় উড়োজাহাজ টারবুলেন্সে পড়ে। তবে স্বচ্ছ বাতাসের মধ্যেও টারবুলেন্স হয়।
অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ জন স্ট্রিকল্যান্ড বলেন, এত উড়োজাহাজ চলাচলের মধ্যে এমন টারবুলেন্স বিরল ঘটনা। বিবিসিকে তিনি আরও বলেন, এ ধরনের মারাত্মক টারবুলেন্স আর আঘাতের কারণ হতে পারে। আরও প্রাণঘাতীও হতে পারে।
বিবিসির মতে, গবেষণা দেখাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন ভবিষ্যতে মারাত্মক টারবুলেন্স সৃষ্টি করবে।