প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে আমাদের জানুয়ারিতে নির্বাচন করতে হবে। যার কারণে নভেম্বরের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে নিতে বলেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য, রাজনীতির নামে জ্বালাও-পোড়াও শুরু হয়েছে। তারপরও আপনারা খেয়াল রাখবেন, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা যাতে অব্যাহত থাকে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে হবে।
রোববার সকাল ১০টায় গণভবনে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ও বোর্ডের চেয়ারম্যানরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কারও রাজনীতির ওপর হস্তক্ষেপ করিনি। শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে আমরা বাধা দেইনি। কিন্তু তারা যখন আবার জ্বালাও-পোড়াও শুরু করলো। বাস-ট্রেনে আগুন দিয়েছে। এসব কাজের হুকুমদাতা ও অর্থদাতাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেবো, নাকি ব্যবস্থা নেবো? অনেকে আবার তাদের গ্রেফতার নিয়ে সমালোচনা করে। যারা এভাবে মানুষের জীবন নষ্ট করবে, জাতীয় সম্পদ নষ্ট করবে, আমরা ছাড় দেবো না। ব্যবস্থা নেবো।
এসময় ফলাফলে কৃতকার্যদের অভিনন্দন জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, যারা হয়তো ভালো রেজাল্ট করতে পারেনি, তাদেরও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। অভিভাবকদের বলবো, যারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি, তাদের সহানুভূতি দেখাতে হবে। সে যে পারে নাই, সেটার কারণ বের করে তাকে আরও মনোযোগী হতে উৎসাহী করতে হবে। তাকে ধমক বা গালমন্দ করা ঠিক হবে না। এটা আমাদের বিনীত অনুরোধ থাকবে, কাউকে ধমক বা গালমন্দ করবেন না। এগুলো কোমলমতি এই ছেলেমেয়েগুলো নিতে পারে না। পরে তারা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। সমস্যা চিহ্নিত করে সেটি সমাধানে সহযোগিতা করলে ভবিষ্যতে তারা ভালো করতে পারবে।
পাসের হার নিয়ে তিনি বলেন, ছাত্রীদের পাসের হার বেশি। এজন্য ধন্যবাদ তবে, ছেলেরা কেন পিছিয়ে থাকলো, এটা বের করতে হবে। কারণ লিঙ্গ সমতায় নজর দিতে হবে। ছেলেমেয়ে একসঙ্গে এগিয়ে যাক, আমরা চাই।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নির্ধারিত সময়ে ফলাফল প্রকাশ পাওয়ায় আন্তরিক ধন্যবাদ। জ্বালাও-পোড়াও এর মধ্যে যে আপনারা যথা সময়ে কাজটি করতে পেরেছেন এটি বড় ব্যাপার। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। সবার প্রচেষ্টায় আমরা এটি করতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গবেষণার ওপর সবেচেয়ে গুরুত্ব দিতে চাই। বিজ্ঞান শিক্ষায়ও আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। ১২টি বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। কারিগরি শিক্ষায়ও যাতে ছেলেমেয়েরা এগিয়ে আসে, সেদিকে আমরা নজর দিচ্ছি।
তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় ফলাফলে বেশ কিছু ইতিবাচক লক্ষণ আছে। এটা আমাদের ইতিবাচক উদ্যোগের ফলেই হয়েছে বলে মনে করি। শিক্ষার প্রচারে সংসদ টেলিভিশনকে আরও ভালো ভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৪ সালের ৫০০ স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। ২০১৮ সালে তারা এমন অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। পরে করোনা এসে আমাদের সবাইকে ভীতসন্ত্রস্ত করে দিল। নানাভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কিন্তু ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় শিক্ষার গতি অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। সেই সময় সমস্ত বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে, তখনও ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল দেওয়ার রীতিটা ঠিক রাখা হয়েছে।
এবছরের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সব শিক্ষাবোর্ড মিলিয়ে পরীক্ষায় মোট পাস করেছেন ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫২ জন পরীক্ষার্থ। শুধু ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৯ শতাংশ।
২০২২ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। সেই হিসাবে এবার পাসের হার ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ কমেছে।
এর আগে, সকাল ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফলের সারসংক্ষেপ হস্তান্তর করেন।
এ বছর সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ ১১টি বোর্ডের ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮৮৭ জন এবং ছাত্রী ৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৫৫ জন। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় বোর্ড সাব কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।