বিএনপির পর এবার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছে গণতন্ত্র মঞ্চ। আগামী সপ্তাহ থেকেই বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার পরিকল্পনা করছে তারা। এর মাধ্যমে সরকার পতনের আন্দোলনে ঐক্যে পৌঁছাতে চায় বাম ঘরানার এ রাজনৈতিক জোট। তবে প্রথম দফায় জোটটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে না।
মঞ্চের নেতারা বলছেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সামাজিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন তারা। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আগামীকাল বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সামাজিক সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তারা। এরপর আগামী সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করবেন।
তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের তারিখ এখনো চূড়ান্ত করেনি গণতন্ত্র মঞ্চ। তারিখ ঠিক না হলেও আগামী সপ্তাহে শুরু করে অক্টোবর মাসের মধ্যে এ সংলাপ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বামজোটসহ গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল দলগুলোর সঙ্গে আমরা সংলাপ করব। তবে প্রথম পর্বে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হবে না। পরে তাদের সঙ্গেও সংলাপ হতে পারে।
মঞ্চের নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অফিসে গিয়ে সংলাপ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে জোটের শরিক কোনো দলের কার্যালয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েও সংলাপ হতে পারে। সংলাপে মঞ্চের শরিক দলগুলো থেকে একজন করে প্রতিনিধি অংশ নেবেন। সংলাপের জন্য একটি নির্দিষ্ট কমিটিও গঠন করা হতে পারে।
এ বিষয়ে সাইফুল হক বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে যেটা সুবিধাজনক হবে সেটাই করব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণতন্ত্র মঞ্চের এক নেতা জানান, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে থেকেও দুয়েকটি দল গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে সংলাপ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
একটি সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের সংলাপের ভিত্তি হবে মঞ্চের ঘোষণাপত্র। সংলাপে সরকার বিরোধী আন্দোলনকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় সেই কর্ম-কৌশল গ্রহণের পাশাপাশি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে। কারণ, গণতন্ত্র মঞ্চের লক্ষ্য শুধু সরকার পরিবর্তন নয়, গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার করা তাদের লক্ষ্য।
এ প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের লক্ষ্য শুধু ক্ষমতার পরিবর্তন করা নয়, পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার করা আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যগুলো ইতোমধ্যে আমরা আমাদের মঞ্চের ঘোষণাপত্রে তুলে ধরেছি। সেখানে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের পরিবর্তন, নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারসহ নানা বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা বলছেন, তারা একটু ধীর গতিতে এগোচ্ছেন। কারণ, এখন তারা নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটা বাড়াচ্ছেন। আগামীতে অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বা সংহতি প্রকাশ করার পরিকল্পনা আছে তাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক একটি দলের শীর্ষ নেতা বলেন, অক্টোবর-নভেম্বর থেকে মঞ্চের পক্ষ থেকে আমরা জেলা পর্যায়ে কর্মসূচি শুরু করব। এর আগে আমরা রাজধানী কেন্দ্রিক কর্মসূচি পালন করব। তারপর বিভিন্ন ইস্যুতে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিতে অংশ নেব।
এই নেতা আরও জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটা ঐক্যের জায়গায় পৌঁছাতে চাই আমরা। কীভাবে কোন প্রক্রিয়ায় আমরা আন্দোলন করতে পারি, পরবর্তীতে সরকার গঠন কীভাবে হবে, সেখানে কারা থাকবে? কিংবা ধ্বংস হয়ে যাওয়া প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থা কীভাবে সংস্কার করা হবে? এসব বিষয় আমরা বিরোধী দলগুলোর কাছে তুলে ধরতে চাই।