সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটিতে গিয়ে লাপাত্তা ৪ শতাধিক শিক্ষক

দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪১০ শিক্ষক ছুটিতে গিয়ে আর কাজে যোগদান করেননি। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭ বছর থেকে সর্বনিম্ন ৭ মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। এসব শিক্ষকের মধ্যে অনেকে চিকিৎসা ছুটি নিয়েছেন।

এছাড়া ধর্মীয় ও তীর্থস্থান পরিদর্শন, বিদেশে ভ্রমণ এবং উচ্চশিক্ষার কারণ দেখিয়ে ছুটি নেওয়ার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। অনুপস্থিত এসব শিক্ষকের কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি জমিয়ে সেখানে স্বামী-সংসার নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। তবে দেশের ভেতরে অবস্থান করে ইচ্ছাকৃতভাবেই ক্লাস না নেওয়া শিক্ষকও আছেন। লাপাত্তা ওইসব শিক্ষকের কেউ আবার মাসের পর মাস বেতন-ভাতাও তুলেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের মাধ্যমে একজন করে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার (ইউএইও) নিবিড় তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।

মাস গেলে কর্মস্থলে উপস্থিতির ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকরা প্রত্যয়নপত্র দেন। এর ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ইউএইও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (টিইও) কাছে ‘স্যালারি রিপোর্ট’ দেন। তারপরই টিইও বেতন পাশ করেন। এই অবস্থায় যেসব শিক্ষক ছুটি বা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার পরও বেতন-ভাতা নিয়েছেন, উল্লিখিত তিন পর্যায়ে সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব হয়নি। আবার এই অবস্থায় চাকরিতে বহাল থাকাটাও মাঠ কর্মকর্তাদের সহায়তা ছাড়া সম্ভব হতে পারে না বলে মনে করেন তারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসাবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) সরকারের পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত। তাই তাদের লঘু বা গুরুদণ্ড উভয়টিও দেবেন তারা। আর প্রধান শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এ ধরনের দায়িত্ব বর্তায় উপ-পরিচালকের ওপরে। ছুটি শেষে কাজে যোগ না দেওয়া কিছু শিক্ষকের তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। সেটির আলোকে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে বলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর অনুপস্থিত থাকার পরও যথাসময়ে কেন রিপোর্টিং হয়নি, সেটির সঙ্গে কোন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কতটুকু দায় আছে, তা নিরূপণের কাজ চলছে। শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-উভয়ই সরকারি চাকরি বিধিমালার আলোকে শাস্তির মুখোমুখি হবেন।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, দিনের পর দিন শিক্ষকরা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও বিষয়টি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজরের বাইরেই রাখা হয়েছিল। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তা রহস্যজনক কারণে জানাননি। সম্প্রতি বিষয়টি নজরে এলে মন্ত্রণালয় থেকে মাঠপ্রশাসনে প্রতিবেদন চাওয়া হয়। এরপরই টনক নড়ে। এখন পর্যন্ত ৪১০ জনের যে তালিকা পাওয়া গেছে তারমধ্যে ৩৫ জনই প্রধান শিক্ষক। ৬ জন চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক। বাকিরা সহকারী শিক্ষক। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

অনুপস্থিত শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে অবশ্য ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসাবে কাউকে শোকজ দেওয়া হয়েছে। আবার কারও বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

শিক্ষা কর্মকর্তারা জানান, কৈফিয়ত তলব বা শোকজ দেওয়া হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর জবাব পাওয়া যায় না। বিশেষ করে বিদেশে একেবারে পাড়ি জমানো শিক্ষকের ক্ষেত্রে এমন দৃষ্টান্ত বেশি। শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার সিড্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাজনীন আক্তার ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই ২ দিনের চিকিৎসার জন্য ছুটি নেন। সেই থেকে সাড়ে ৪ বছর বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত আছেন তিনি। এই শিক্ষিকাকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শোকজ দিলেও তার উত্তর দেননি।

পরে সংশ্লিষ্টরা জানতে পারেন যে, তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন। তবে হবিগঞ্জের মাধবপুরের হরষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হোসনে আরা বেগমের ঘটনা ভিন্ন রকম। তিনি ভারতে চিকিৎসার জন্য ১ মাসের ছুটি নিয়েছিলেন ৩১ ডিসেম্বর। কাজে যোগ না দিয়েই ১০ আগস্ট তিনি ফের ছুটির আবেদন করেন। চিকিৎসকের পরামর্শেই তাকে ভারতে অবস্থান করতে হচ্ছে।

ওই উপজেলার টিইও সিদ্দিকুর রহমান  জানান, কোনো শিক্ষক চিকিৎসার জন্য ছুটিতে গেলে বেতন পান না। যোগদানের পর আবেদন করলে অর্ধগড় হিসাবে বেতন পান। সেই হিসাবে এই শিক্ষক বেতন নিতে পারেননি। কিন্তু বিদেশে থাকাকালে তিনি ছুটির আবেদন করেছেন বলে শুনেছি। এ বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আমরা জানিয়েছি।

মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, কিশোরগঞ্জের ভৈরবে হাজী রাজা মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফাতেমা শারমিন ২০১৫ সালের ১৫ মে থেকে অদ্যাবধি কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। কিন্তু মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পূর্ব কাচিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সোনিয়া আক্তার ২৮ মার্চ স্কুল থেকে ২ দিনের ছুটি নিয়ে চলে যান স্পেনে স্বামীর কাছে। সেখানে বসেই তিনি কয়েক মাস বেতন পেয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা  জানান, অনুপস্থিত অধিকাংশ শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সাময়িক বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত করার বিধান আছে। এছাড়া বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর বিধানও আছে। এছাড়া বিভাগীয় মামলায় সাড়া দিলে অপরাধের ধরন অনুযায়ী লঘু দণ্ড হিসাবে বেতন স্কেল কমানো, পদাবনমন করা হয়ে থাকে। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের চাঁনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মেহবুবা রায়না ইনক্রিমেন্ট স্থগিতের শাস্তিপ্রাপ্ত হন।

জানা যায়, তিনি ২০১৬ সালে স্কুলে যোগ দিয়ে ৩ মাস নিয়মিত ক্লাস নেন। এরআগে ভর্তি হন (২০১৪-১৫ শিক্ষবর্ষে) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা বিভাগের ওই ছাত্রী চাকরিতে যোগদানের পর বিভিন্ন মেয়াদে শুধু মেডিকেল ছুটিই কাটিয়েছেন ২১৩ দিন। এই ফাঁকে চলে লেখাপড়া। ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর এই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তার ইনক্রিমেন্ট স্থগিত হয়েছে। পরে চাকরিতে যোগদানের অনুমতি পান।

পরে ২০১৯ সালের শেষের দিকে মাঝে-মধ্যে স্কুলে যেতে শুরু করেন। এর মধ্যে ২০২০ সালের মার্চে করোনা প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। কিন্তু ওই সময়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ওয়ার্কশিট বিতরণের মাধ্যমে লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা ছিল সরকারের। তবে ওই কাজে সংশ্লিষ্ট শিক্ষিকা তেমন একটা অংশ নেননি এবং ক্লাস না করিয়েই ৫ বছর বেতন তুলেছেন বলে তারই সহকর্মীরা অভিযোগ করেছেন।

 

 

Facebook
X
WhatsApp
Email
Telegram
সর্বশেষ
ফেসবুক নেটওয়ার্ক ও পার্টনার পেজ
মিডিয়া
Cover for Table Talk Uk
595,824
Table Talk Uk

Table Talk Uk

Table Talk UK Discusses the political and social issues of the country. Our only purpose is to expose social inconsistencies and politics in the face of accountability on the path to democracy and talk about the rights of people.

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
PPCA Error: Due to Facebook API changes it is no longer possible to display a feed from a Facebook Page you are not an admin of. The Facebook feed below is not using a valid Access Token for this Facebook page and so has stopped updating.

Smash Balloon Custom Facebook Feed WordPress Plugin The Custom Facebook Feed plugin

সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
কপিরাইট © 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত — লন্ডন মিরর।
সম্পাদক: হাসিনা আক্তার
সার্চ করুন
লগইন/সাইন আপ
সর্বশেষ সংবাদ জানতে—এখনই সাবস্ক্রাইব করুন!