ঘাটতি বাজেট অর্থায়নে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেবে। সরকারের এই অধিক মাত্রার ঋণ বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম।
তিনি বলেন, এর ফলে বিনিয়োগে ও কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
শনিবার (৮ জুন) মতিঝিলে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
এ সময় এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান, ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদসহ এফবিসিসিআই’র পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এ ঘাটতি মেটাতে সরকারকে অভ্যন্তরীণ উত্স থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা নিতে হবে। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিতে হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে সরকারকে সুদের বোঝা টানতে হচ্ছে। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের এই অধিক মাত্রার ঋণ নেওয়ার ফলে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে প্রাক্কলিত রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য উপজেলা পর্যন্ত কর অফিস বিস্তৃত করার পরামর্শ দেন এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার জরুরি। সেই সাথে ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বৃদ্ধির জন্য করের আওতা বাড়ানো প্রয়োজন।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৯.৭%। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্য ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য খাত থেকে আসবে ৬৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ বিশাল রাজস্ব সংগ্রহ করা হবে সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এমনিতেই দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকসহ রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়া বিশ্বব্যাপী বিরাজমান কঠিন পরিস্থিতির কারণে চাপের মুখে; বলেন এফসিসিআই সভাপতি।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক ব্যবস্থার পরিবর্তে যথাসম্ভব সুলভ সুদে ও সতর্কতার সঙ্গে বৈদেশিক উত্স থেকে ঋণ নিতে পরামর্শ দেন তিনি।
এই ব্যবসায়ীনেতা বলেন, বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতা বাড়ানো হয়েছে। এসব উদ্যোগ সামাজিক নিরাপত্তা সুসংহত এবং সামাজিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তবে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছে যাতে এ সুবিধা যথাযথভাবে পৌঁছায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয় সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এটা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানান এফসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয়, মূল্যস্ফীতি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় এনে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয় সীমা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বর্তমান মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় এই করমুক্ত সীমা ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য সুপারিশ করছি।