তিন বছর ধরে অফিস করেন না। তবু, তাকে নিয়মিত বেতন-ভাতা দিচ্ছে ওয়াসা। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম-এ-খানের আস্থাভাজন এই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানেরও ঘনিষ্ঠ।
ওয়াসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্ষমতার পালাবদলের ভয়ে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত কর্মকর্তা কর্মচারিদের বিশেষ সুবিধা দিচ্ছেন তাকসিম।
ঢাকা ওয়াসায় দুর্নীতি করার চেষ্টা করেছিলও এমন অভিযোগে চাকুরিচ্যুত করেছে এক নির্বাহী প্রকৌশলীকে। এভাবে তাকসিম এ খান গেলো ১০ বছরে প্রায় ১৫ জন কর্মকর্তাকে চাকুরিচ্যুত করেছেন; অভিযোগ আছে পছন্দের ব্যক্তির ক্ষেত্রে দিলদরিয়া, আর অপছন্দের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এমন খড়গ হস্ত হন ওয়াসার এমডি।
ঢাকা ওয়াসার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাধ্যতামূলকভাবে ছবিসহ আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে দৈনিক হাজিরা নিশ্চিত করতে হয়। কারও বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন না থাকলে বেতন ভাতা পাওয়ার কোন সুযোগ নেই ওয়াসার অফিস আদেশ অনুযায়ী।
কিন্তু বাস্তবতা হলো তাকসিম এ খানের পছন্দের ব্যক্তি হলে সবই সম্ভব। যেমন বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন করার তোয়াক্কা করেননি ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলমগীর হাছিন আহমেদ। তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও বিএনপিপন্থী প্রকৌশলীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ- এ্যাবের মহাসচিব।
বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত এই জেষ্ঠ প্রকৌশলী গেলো তিন বছর ধরে অফিস না করেও নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। একই সঙ্গে তিনি আবার ওয়াসার ঠিকাদারী ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এমবিএইচ নামের এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় রাজধানী পরীবাগ এলাকায়। দুই দফা সেখানে গিয়ে আলমগীর হাছিনকে পাওয়া যায়নি। ফোনেও সাড়া মেলেনি।
এমডি তাকসিমের এ খানের ভীষণ আস্থাভাজন আরেক প্রকৌশলী ও বিএনপিপন্থী ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশানের নেতা আজিজুল ইসলাম পান্না। ১৯৯২ সালে চট্টগ্রাম বিআইটিতে ছাত্রসংসদ নির্বাচনে তিনি ছাত্রদলের প্যানেল থেকে এজিএস নির্বাচিত হন।
যে কমিটির বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সালে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ছাত্রলীগ নেতা মহরম আলী হত্যার অভিযোগ রয়েছে। তাকে ওয়াসার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আট হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের পরিচালক বানাতে মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছিলেন তাকসিম এ খান। কিন্তু মন্ত্রীর হস্তক্ষেপের কারণে আজিজুল পান্নাকে প্রকল্প পরিচালক বানাতে পারেনি ওয়াসার এমডি।
তবে পান্নার জায়গায় পছন্দের আরেক বিএনপি পন্থী তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ওয়াহিদুল ইসলাম মুরাদকে ঢাকা ওয়াসার সবচেয়ে বড় আট হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের পিডি করা হয়েছে। অভিযোগ আছে তাকসিমের আস্থাভাজন মুরাদ বুয়েটের আহসান উল্লাহ হলের ছাত্রদলের হল শাখার নেতা ছিলেন।
২০২২ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় থেকে ঢাকা ওয়াসার সহকারি সচিব রফিকুল ইসলামকে শিবিরের সক্রিয় সদস্য হিসেবে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির নানা অভিযোগের তদন্ত করতে নির্দেশ দেয়া হয়। এখানেও আছেন এমডি তাকসিম। রফিকুল ইসলাম তাঁর ঘনিষ্ট বলে সেই তদন্ত এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
অভিযোগ আছে তিনিও তাকসিম এ খানের ঘনিষ্ঠ। একইভাবে অর্ধশত কোটি টাকা অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমান পাবার পরও প্রকৌশলী আকতারুজ্জামানের বিরুদ্ধেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি করে ওয়াসায় ব্যবসা করার প্রমাণ মেলার পর শাস্তির বদলে পদন্নোতি পেয়েছেন প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম।
অথচ ‘দুর্নীতি করার চেষ্টা করেছেন’ এমন অভিযোগে ২০২১ সালে নির্বাহী প্রকৌশলী ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অসীম কুমার ঘোষকে চাকুরীচ্যুত করেন তাকসিম এ খান। শুধু বেছে বেছে সরকার সমর্থকদের বিভিন্ন অভিযোগে চাকুরীচ্যুত নয়, তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন ওয়াসা আওয়ামী লীগের সিবিএ অফিসেও। যদিও পাশেই নিয়মিত খোলা থাকে বিএনপি সমর্থিত সিবিএ অফিস।
বিএনপিপন্থিদের প্রতি উদার হলেও ওয়াসার দীর্ঘ সময়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান আওয়ামী লীগপন্থী প্রকৌশলীদের ওপর খড়গহস্ত। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নির্বাহী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হকের অফিসে কয়েকদিন বায়োমেট্রিক ফিঙ্গার না থাকা ও মন্ত্রীকে অবজ্ঞ করাসহ তিন হ্যাসকর অভিযোগে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে।