আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার খালেদা জিয়ার প্রতি সংবেদনশীল। কিন্তু এখনকার সুবিধার বাইরে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে খালেদা জিয়ার জন্য আর কিছু করার নেই।.
রোববার বিকেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগরের সব সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত যৌথ সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে তা মানবিকতার দৃষ্টান্তে পৃথিবীতে বিরল। যারা জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার হত্যার পরিকল্পনাকারী তাদের প্রতি আওয়ামী লীগের উচিত ছিলো তেমন ব্যবহার দেওয়া।
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। টানা ৫৩ দিন ধরে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে তিন দফায় তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর তাকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে তার পরিবার। পরে সেই আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ওই আবেদনের বিষয়ে রোববার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদনে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার সুযোগ নেই মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রী জানান, বিদেশ যেতে হলে খালেদা জিয়াকে আবারও জেলে গিয়ে পরে আদালতে আবেদন করতে হবে।
শনিবার ভয়েস অব আমেরিকায় সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে হলে তাকে কারাগারে ফেরত যেতে হবে। এরপর আদালতের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে হলে দেশের প্রচলিত আইন মেনে আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেতে হবে। খালেদা জিয়ার বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত আইনসম্মতভাবেই হবে।
আওয়ামী লীগ অবৈধ দল হলে তাহলে কেন খালেদা জিয়ার মুক্তির কিংবা বিদেশে পাঠানোর জন্য অনুমতি চাওয়া হয়-প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে কথার সীমারেখা মানা উচিত।
তিনি বলেন, আ স ম আব্দুর রবও একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে আ স ম আব্দুর রব উদাহরণ হতে পারে না। হাজী সেলিমও কিন্তু আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ পাননি।
আওয়ামী লীগ শূন্যে ভেসে হাওয়ায় উড়ে কিংবা বন্দুকের নল উঁচিয়ে ক্ষমতায় বসেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আল্টিমেটামেও বিএনপি ব্যর্থ মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, গত ১৫ বছরে অনেকবার বিএনপির হাঁকডাক শোনা হয়েছে। বিএনপির বিভিন্ন সময় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আসন নিয়ে তিরস্কার করে সমালোচনা করেছিল, যা ছিলো বিএনপির অহংকার, দম্ভ। যারা আওয়ামী লীগের পতন দেখছে তাদের নিজেদের পতন হয় কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়।
রাজনীতিবিদদের বেফাঁস কথা বলা থেকে দূরে থাকা উচিত, বক্তৃতা বিবৃতিতে বেফাঁস কথা না বলার পরামর্শও দেন ওবায়দুল কাদের।
দলের আহ্বানে যেকোনো নেতাকর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে সরকারকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে বিএনপি, তাদের সহিংসতারা বিরুদ্ধে আমাদের নেতাকর্মীদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, এক এগারোর মতো অস্বাভাবিক সরকার তৈরি করার সুগভীর ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি, তাদের একমাত্র টার্গেট হচ্ছে শেখ হাসিনাকে হটানো।
অক্টোবরকে ঘিরে বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচির মধ্যে নেতাকর্মীদের দিক নির্দেশনা দিতে আওয়ামী লীগের এই যৌথসভা। ঢাকা মহানগর, পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সহযোগি সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা এই বৈঠকে যোগ দেন।