প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাকে বাঁচাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। যেহেতু আমার জীবন ঝুঁকিতে থাকে, সেজন্য স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যরা নিয়োজিত থাকে। কিন্তু নিরাপত্তার জন্য যেন জনবিচ্ছিন্ন না হয়ে যাই সেদিকটা সংবেদনশীলতার সঙ্গে দেখতে এসএসএফকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
তিনি বলেন, জনবিচ্ছিন্ন হতে গুলি-বোমা লাগে না। এমনিতেই শেষ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাই না। কেননা সাধারণ মানুষই আমার প্রাণ শক্তি।
বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসএসএফের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্টের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিলো, তারা দেশকে এগিয়ে নিতে পারেনি। বরং ক্যু হয়েছে। বিমান বাহিনীর হাজার হাজার সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিলো। দেশ যে তিমিরে সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছিলো। তবে এতো বড় গুরু দায়িত্ব নিতে হবে সে প্রস্তুতি কখনোই ছিলো না। তখন দেশের দুরাবস্থা সহ্য করার মতো ছিলো না।
যতোক্ষণ নিঃশ্বাস আছে ততোক্ষণ মানুষকে উন্নত জীবন দেয়ার চেষ্টা করে যাবো, এমন অঙ্গিকার করে শেখ হাসিনা বলেন, জীবন ঝুঁকি জেনেই দেশে ফিরেছি। দেশে ফেরার পর থেকে শত বাধা পেয়েও পিছিয়ে যাইনি। দেশের জন্য কাজ করছি।
এদিকে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য সরকার ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ নামে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর আকার বৃদ্ধি, আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম সংগ্রহ ও সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রশিক্ষণ।
সরকারপ্রধান বলেন, ২০০৯ থেকে ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় আছি বলেই উন্নয়ন দৃশ্যমান ও টেকসই করতে পেরেছি। সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
অপরদিকে, সম্প্রতি কক্সাবাজারে মায়ানমার সীমান্তে কিছুটা উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সীমান্তের ওপার থেকে কখনও কখনও ছুটি আসছে গুলিও।
কক্সবাজার সীমান্তে বাংলাদেশের জনগণ ও স্থাপনা লক্ষ্য করে মিয়ানমার থেকে গুলি ছোড়ার ঘটনা ইতিমধ্যে জাতিসংঘে তুলে ধরেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের যে কোনো সংঘাত তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে এটি যেন বাংলাদেশের জনগণ ও সম্পদকে প্রভাবিত না করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কাউকে আক্রমণ করতে যাবো না, তবে আক্রান্ত হলে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রস্তুত থাকতে হবে।
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চের ঘোষণা অনুসারে, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮৬ সালে ‘প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স অর্ডিন্যান্স’ নামে একটি অধ্যাদেশ জারি করেন। যা একই বছর ১৯ জুন থেকে কার্যকর হয়।
পূর্বের ঘোষণা অনুসারে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদের তত্ত্বাবধানে রাষ্ট্রপতি ও বিদেশ থেকে আগত রাষ্ট্রপ্রধানদের নিরাপত্তার জন্য ১৯৮৬ সালের ১৫ জুন ‘প্রেসিডেন্ট সিকিউরিটি ফোর্স’ নামে একটি বিশেষ নিরাপত্তা দল গঠন করেন। পরে বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি চালু হওয়ার পর ১৯৯১ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর এর নাম পরিবর্তন করে ‘স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) নামকরণ করা হয়।
যদিও প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতি ও রাষ্ট্র কর্তৃক ঘোষিত অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা দিতে এসএসএফ গঠিত হয়েছিল। কিন্তু সংসদীয় সরকার পদ্ধতি চালু হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি ছাড়াও সরকারপ্রধানকেও এসএসএফ নিরাপত্তা দিয়ে আসছে এবং এ সংস্থাটিকে তখন থেকে পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তারের অধিকার দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন গ্যাজেট আকারে প্রকাশ হওয়ার পর সংস্থাটি বর্তমানে জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদেরও সর্বস্থানে নিরাপত্তা দিয়ে আসছে।